সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুইজারল্যান্ডে আগের চেয়ে অনেক বেশি বর্ণবাদী আচরণের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির মানবাধিকার সংস্থা এবং বর্ণবাদবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সহযোগিতায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে তাতে সে দেশে বর্ণবাদের চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি জরিপ করা একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বর্ণবৈষম্যের ঘটনা কর্মক্ষেত্রে নয় বরং স্কুলে ঘটছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১ বছর বয়সি এক ছাত্রকে তার ক্লাসরুমে একাধিকবার জাতিগতভাবে অপমান করা হয়েছে। আরেকজন কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সংরক্ষণের কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং সহপাঠীরা তাকে কালো বলে অপমান অপদস্থ করে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৮৭৬টি বর্ণবাদের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাগুলো ২০২২ সালের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। শিক্ষা খাতে বর্ণবাদী আচরণ সম্পর্কে যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে তার বেশিরভাগ ঘটনাই কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত।
অন্য একটি জরিপ অনুসারে, গত পাঁচ বছরে সুইজারল্যান্ডে বসবাসকারী প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন জাতিগত বৈষম্যের শিকার হয়েছে। বর্ণবাদবিরোধী একটি গ্রুপের পরিচালিত পর্যবেক্ষণ জরিপে বলা হয়েছে, ১৭ শতাংশ মানুষের অভিযোগ তারা বর্ণ বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, জাতিগত বৈষম্যের শিকার হয়েছে এমন বেশির ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে। জীবনের সব ক্ষেত্রেই জাতিগত বৈষম্য দেখা দেয়। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে, তারা তাদের দৈনন্দিন কর্মজীবনে বা চাকরি খুঁজতে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
এছাড়া ৩০ শতাংশ প্রকাশ্য জনসম্মুখে এবং ২৭ শতাংশ স্কুলকে জাতিগত বৈষম্যের প্রধান জায়গা বলে অভিহিত করা হয়েছে ওই জরিপে। এর আগে জাতিসংঘের একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ ঘোষণা করেছিল, সুইজারল্যান্ডে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ প্রতিদিন বর্ণবৈষম্যের শিকার হওয়ার পাশাপাশি পুলিশের দ্বারাও হেনস্তার শিকার হয়।
জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, তারা সুইজারল্যান্ডে জাতিগত বৈষম্যের বিস্তার বিশেষ করে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মানুষের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইস কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ইতিবাচক ব্যবস্থা নিলেও এসব শক্তিশালী কাঠামোগত বৈষম্য আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কাজ করা ফেডারেল কমিশনের পরিচালক আলমা উইকেন বলেছেন, সুইজারল্যান্ডে অতীতের তুলনায় বর্তমানে স্কুলগুলোতে বর্ণবৈষম্য বেড়েছে। তবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও এ বিষয়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণের ফলে পরিস্থিতি পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ইউরোপিয়ান এজেন্সি ফর ফান্ডামেন্টাল রাইটসের (এফআরএ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপের দেশ জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ফিনল্যান্ডের কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসীরা গায়ের রঙের কারণে বেশি বৈষম্য এবং হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, ইতালি, ইউক্রেনের মতো দেশেও বৈষম্য বাড়ছে।