যুক্তরাষ্ট্রে গরুর দুধে বার্ড ফ্লু, মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রে গরুর পাস্তুরিত দুধে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি গবেষণার সময় নমুনা হিসেবে নেওয়া গরুর দুধে ভাইরাসের অবশিষ্টাংশ পেয়েছে তারা। আক্রান্ত গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসার মধ্য দিয়ে একজন মানুষও আক্রান্ত হয়েছেন। তার উপসর্গগুলো মৃদু। এতে এই ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গবাদিপশুর মধ্যে হাইলি প্যাথোজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (এইপিএআই) বা বার্ড ফ্লু ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
এইচপিএআই-এর এইচ৫এন১ ধরনে আক্রান্ত হয়ে লাখ লাখ হাঁস-মুরগি মারা গেলেও, আক্রান্ত গরুকে গুরুতর অসুস্থ হতে দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন বলেছে, জাতীয় জরিপের সময় তারা আক্রান্ত প্রাণীর দুধে ভাইরাস শনাক্ত করেছে। প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এবং প্রক্রিয়াকরণের শেষেও এমন অবস্থা দেখা গেছে।
পাস্তুরিত দুধের নমুনাগুলো নিয়ে একটি কোয়ান্টিটেটিভ পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (কিউপিসিআর) পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, পাস্তুরিতকরণ প্রক্রিয়ার সময় উত্তাপে ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। নমুনায় প্যাথোজেনের জেনেটিক উপাদানের অবশিষ্টাংশ শনাক্ত হয়েছে শুধু।
কিভাবে এটা ঘটল?
সর্বপ্রথম বার্ড ফ্লু এ বা এইচফাইভএন১ ভাইরাস শনাক্ত হয় ১৯৯৬ সালে। তবে ২০২০ সাল থেকে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত পাখির সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। তখন থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়তে দেখা গেছে।
মার্চে গরু ও ছাগলও এ তালিকায় যুক্ত হয়। এতে বিশেষজ্ঞরা হতবাক হন। কারণ এর আগে পর্যন্ত পশুরা এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণাই করা হতো না।
প্যারিসভিত্তিক পাস্তুর ইনস্টিটিউটের পরিবেশ ও সংক্রমণ ঝুঁকি বিভাগের পরিচালক জঁ ক্লদ মানুগুয়েরা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে একটি নতুন এইচ৫এন১ ভাইরাস স্থানীয় ভাইরাসের সঙ্গে মিশে গেছে এবং তাতে এ ভাইরাসের দ্রুতগতিতে গাভির বাঁট আক্রান্ত করার সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।’
মহামারির ঝুঁকি কতটা?
এখন পর্যন্ত যেসব গবেষণা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন- বার্ড ফ্লু ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়ালে খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লিয়ন হাসপাতালের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ব্রুনো লিনা বলেন, গরুর দুধে ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি আসলেই কি উদ্বেগের? না, যদিও অন্য কোনো প্রাণীর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ভালো খবর নয়। প্রাণী ও মানুষের নিয়মিত আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। তবে চার-মাস আগের তুলনায় বড় ধরনের মহামারি ঝুঁকি তৈরির মতো বড় ধরনের কোনো মিউটেশন আমরা ভাইরাসটিতে দেখছি না।
মানুষের ঝুঁকি কতটা
এপ্রিলের শুরুর দিকে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেছিল, টেক্সাসের একটি ডেইরি ফার্মে কর্মরত এক ব্যক্তি গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসার পর বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেরে উঠছেন। তার সামান্য উপসর্গ ছিল। একটি গরুর সরাসরি সংস্পর্শে আসার পর তার একটি চোখে সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল।
ফ্রান্সের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ব্রুনো লিনা বলেন, আমরা জানি এ ভাইরাস মানবদেহের সুনির্দিষ্ট দুটি জায়গায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তাহলো চোখে হালকা ধরনের সংক্রমণ এবং ফুসফুসের গভীরতম অংশ পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ।
আক্রান্তদের মধ্যে যাদের পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ হয়, তাদের অবস্থা গুরুতর হতে দেখা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবে দেখা গেছে, গত ২০ বছরে এইচ৫এন১ ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া প্রায় ৯০০ মধ্যে যাদের পালমোনারি অ্যালভিওলিতে সংক্রমণ হয়েছে, তাদের অর্ধেকই মারা গেছেন। তবে পাস্তুরিত দুধে এ ভাইরাস কণার উপস্থিতি পাওয়া গেলেও এ দুধ পান করার কারণে ঝুঁকির মাত্রা প্রায় নেই বললেই চলে।
বিশেষজ্ঞ লিনা বলেন, পাস্তুরিত করা হলে ভাইরাসটির উপস্থিতিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব না হলেও এটি ধ্বংস হয়ে যায়।
কাঁচা দুধের ক্ষেত্রে কী ঝুঁকি
ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশে কাঁচা পনিরের বেশ কদর আছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের পনির উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।
প্যারিসভিত্তিক পাস্তুর ইনস্টিটিউটের পরিবেশ ও সংক্রমণ ঝুঁকি বিভাগের পরিচালক জঁ ক্লদ মানুগুয়েরা বলেন, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটির নতুন ধরনটি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া ধরনের চেয়ে আলাদা। এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে কোনো গরুর শরীরে এইচ৫এন১ ভাইরাস শনাক্ত হয়নি।
জঁ ক্লদ মানুগুয়েরা মনে করেন, এ ভাইরাস যতটা দ্রুতগতিতে রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম, তাতে এর ওপর নজর রাখা জরুরি। তবে দুধ পান নিয়ে ভোক্তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।