গাজা দুর্ভিক্ষকে আরও দুর্বিষহ করে তুলল ইসরাইলি বাহিনী। নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যার পাশাপাশি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল সাহায্য পৌঁছানোর সব পথ। এবার ইসরাইলের নির্মম হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পাননি ত্রাণকর্মীরাও।
সোমবার রাতে ইসরাইলি বাহিনীর অতর্কিত হামলায় নিহত হয়েছেন ৭ স্বেচ্ছাসেবী। ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) সেই সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে গাজায়। এমনকি ইতোমধ্যেই সাহায্যকারী এই সংস্থাটি গাজায় নিজেদের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। ত্রাণের ওপর নির্ভর করা গাজাবাসীর জন্য সংস্থাটির এই সিদ্ধান্ত নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিবিসি, দ্যা গার্ডিয়ান।
ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের কার্যক্রম বন্ধের পরই গাজার অসংখ্য ফিলিস্তিনি ভাবছেন কীভাবে তারা তাদের পরিবারের খাবার দেবে। কেননা অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে ২০ লাখ মানুষের জন্য খাবার পরিবেশন করত। এ বিষয়ে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল সতর্ক করেছে যে, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সঙ্গে যা ঘটেছে তা পুরো ত্রাণ ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
কে গাজায় ত্রাণ সংস্থার কর্মীদের প্রতিটি গাড়িকে সুপরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ইসরাইলি বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেজ। হামলায় সংস্থাটির সাত কর্মীকে হত্যার ঘটনা সাধারণ কোনো ভুল ছিল না দাবি করে তিনি।
আন্দ্রেজ বলেন, ইসরাইলি বাহিনীকে বারবার তাদের গতিপথ সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। ডব্লিউসিকে ফিলিস্তিনি কর্মীদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীরাও ইসরাইলের এ হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে শুরু থেকেই ইসরাইলের দাবি, হামলার ঘটনাটি ছিল ‘মারাÍক ভুল’। এ ঘটনায় দেশটি দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এদিকে রেকর্ডসংখ্যক ত্রাণ কর্মীকে গ্রঅ করেছে ইসরাইলি বাহিনী। ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত ২০৬ জন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। এমনকি বিশ্বে গত ৩০ বছরে যত ত্রাণকর্মী মারা গেছেন, গাজা উপত্যকায় তার চেয়ে বেশিসংখ্যক ত্রাণকর্মীকে হত্যা করেছে ইসরাইল। এইড ওয়ার্কার সিকিউরিটি ডাটাবেজের (এডব্লিউএসডি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিষয়টি ‘বিবেকবর্জিত’ অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, হামলার পর তারা অন্তত ৪৮ ঘণ্টার জন্য তাদের কর্মীদের রাত্রিকালীন চলাচল স্থগিত রাখছে। এমনকি এমন ঘটনায় আন্তর্জাতিকভাবে তিরস্কারের সম্মুখীন হচ্ছে ইসরাইল। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে
কানাডা ডব্লিউসিকে ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে। পাশপাশি পূর্ণ তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় ইসরাইলের কাছে জবাবদিহিতা চেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীও। অপরদিকে এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ত্রাণকর্মীদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে।
অন্যদিকে ইসরাইলের অস্ত্র সরবরাহ করায় রাজনৈতিকভাবে চাপের মুখে আছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বুধবার তিন বিরোধী দল এবং রক্ষণশীল দলের কিছু সংসদ সদস্য ব্রিটিশ সরকারের অস্ত্র বিক্রি স্থগিত ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন। পাশপাশি দেশটির সাবেক তিন বিচারপতি অস্ত্র স্থগিতের বিষয়ে চিঠির মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ইসরাইলে অস্ত্র পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে যুক্তরাজ্য। গাজায় ‘সম্ভাব্য গণহত্যার ঝুঁকি’র প্রেক্ষাপটে দেশটিতে অবশ্যই অস্ত্র বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে।
১৭ পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে সই করেছেন ৬০০ জনের বেশি আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তাঁদের মধ্যে আছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক সভাপতি লেডি হ্যালেও। চিঠিতে বলা হয়, গণহত্যা সনদের সম্ভাব্য লঙ্ঘনসহ আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনজনিত জটিলতা যুক্তরাজ্যকে এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরও রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি লর্ড সাম্পশন ও লর্ড উইলসন। আছেন আরও ৯ জন বিচারক ও ৬৯ জন কেসি। অবশ্য এর আগে প্রধানমন্ত্রী সুনাক গত মঙ্গলবার বলেছেন, অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের কাছে ‘খুব সতর্কতামূলক’ একটি ব্যবস্থা রয়েছে।
সংবাদপত্র সানের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি ইসরাইলি ওই হামলার ঘটনায় একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহবান জানান। তবে ইসরাইলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করা বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি সুনাক।