মস্কোয় ভয়াবহ হামলার পেছনে আইএস নাকি অন্য কেউ
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪, ১১:০৩ পিএম
মস্কোর একটি কনসার্টে ভয়াবহ হামলায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৩ জনে। এ ঘটনায় রোববার রাশিয়ায় জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বর্বর এ হামলায় জড়িতদের শাস্তি দিতে ইতোমধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইউক্রেনে পালিয়ে যাওয়ার সময় চার বন্দুকধারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে শনিবার রাতে এক ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ওই হামলার ঘটনায় ইউক্রেনকে দোষ দেওয়ার চেষ্টা করছে রাশিয়া। তবে এতে ইউক্রেন দায়ী নয়।
ইতোমধ্যে এর দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্স (আইএসকেপি)। তবে রাশিয়ার কেউ কেউ বলছেন, এ হামলার পেছনে ওয়াশিংটনের হাত আছে।
আইএসকেপির পরিচয়
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আফগানিস্তান শাখা হলো ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্স (আইএসকেপি)।
গোষ্ঠীটি আইএসআইএলের (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লিবিয়া) অন্যতম সক্রিয় সহযোগী। এক সময় আফগানিস্তান, ইরান, পাকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের অঞ্চলগুলোকে ঘিরে প্রতিষ্ঠিত ছিল খোরাসান। সেই নামানুসারেই আইএসকেপি নামকরণ হয়েছে।
এই গোষ্ঠীর উত্থান হয় ২০১৪ সালের শেষদিকে পূর্ব আফগানিস্তানে। পাকিস্তানি তালেবানের বিচ্ছিন্ন যোদ্ধা ও স্থানীয় যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত হয়ছিল এটি। যারা প্রয়াত আইএসআইএল নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল।
যে কারণে টার্গেট রাশিয়া
শুক্রবার রাতের এ হামলার পরই প্রশ্ন উঠেছে আইএস কেন রাশিয়াকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করল। এ নিয়ে নানা রকম মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে বিশ্লেষকদের কাছ থেকে। তারা বলছেন, মুসলিম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন কারণে আইএসের টার্গেটে পরিণত হয়েছে রাশিয়া।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সোফান সেন্টারের কলিন ক্লার্ক বলেন, দুই বছর ধরেই রাশিয়াকে টার্গেট করেছিল আইএসকে। সংগঠনটি তাদের প্রচার-প্রচারণায় বিভিন্ন সময় টার্গেট করে রাশিয়ার সমালোচনা করতে শুরু করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের গবেষক মাইকেল কুগেলম্যান রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাশিয়াকে নিয়মিতভাবে মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা দেশ হিসেবে দেখে থাকে আইএস। যে কারণে দেশটি এ হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
অতীতে আইএসকেপির হামলাসমূহ
আইএসকেপি যোদ্ধারা ২০২১ সালে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে হামলার দায় স্বীকার করেছিল। ওই হামলায় কমপক্ষে ১৭৫ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৩ জন ছিল মার্কিন সেনা।
এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে কাবুলের একটি প্রসূতি ওয়ার্ডে রক্তাক্ত হামলা চালানোর জন্য আইএসআইএলকে দায়ী করা হয়। যাতে নারী ও শিশুসহ ২৪ জন নিহত হয়। একই বছরের নভেম্বরে গোষ্ঠীটি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায়, যাতে কমপক্ষে ২২ জন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিহত হন।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলে রুশ দূতাবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করে এই গোষ্ঠী।
ভবিষ্যতে কি আরও হামলা হতে পারে?
বিবিসি বলছে, সামরিক বিশ্লেষক ও তুর্কি সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল মুরাত আসলান এ গোষ্ঠী সম্পর্কে বলেন- আইএসকেপি এর আগে ছিল ইরানে। বর্তমানে মস্কোতে আছে। ফলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে আরও হামলা হতে পারে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ফেলো আবদুল বাসিত বলেছেন, রাশিয়া এবং অন্যত্র আরও হামলা হতে পারে। তারা এখন মধ্য এশিয়া অঞ্চলে ফিরে এসেছে এবং তাদের আক্রমণ চালানোর মতো যথেষ্ট সক্ষমতাও রয়েছে।
আইএস নয়, হামলার মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্র
মস্কোয় হামলার পেছনে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র জড়িত বলে মনে করেন রাশিয়ার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির কর্মকর্তা আন্দ্রে পোপভ। তার মতে, মস্কোয় এ নৃশংসতার নির্দেশ দিয়েছে কিয়েভ সরকার। আর এতে অর্থায়ন করেছে ওয়াশিংটন।
একই সুরে সুর মিলিয়েছেন রুশ সংবাদমাধ্যম স্পুতনিকের মূল প্রতিষ্ঠান রোসিয়া সেগোদনিয়ার প্রধান সম্পাদক মার্গারিতা সিমোনিয়ান। তিনি মনে করেন, রাশিয়ার ভয়াবহ হামলার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে চাইছে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো। তারা সবাইকে বোঝাতে চাচ্ছে, এই হামলার পেছনে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাত রয়েছে।
মার্গারিতা সিমোনিয়ান বলেন, হামলাকারীরা এমনভাবে হামলা চালিয়েছেন যেন পশ্চিমারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝাতে পারে, এ হামলার পেছনে আইএসের হাত রয়েছে। তবে হামলায় সন্ত্রাসী সংগঠনটি জড়িত নয়। এ হামলা চালিয়েছেন ইউক্রেনীয়রা।
আরো পড়ুন:
>>মস্কোর হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করতে চান পুতিন: জেলেনস্কি