ঘোড়ার মাংস, পচা ভুট্টা গাছের পাতায় চলছে গাজার মানুষের দিন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:২৮ পিএম
উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দা আবু জিব্রিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় পরিবারের ক্ষুধা মেটাতে প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করছেন তিনি। একটা পর্যায়ে এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন যে নিজের পোষা শখের দুটো ঘোড়াও জবাই করে ফেলেছেন।
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য ঘোড়া জবাই করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। ক্ষুধা আমাদের মেরে ফেলছে।’
শুধু আবু জিব্রিল নয়, এমন পরিস্থিতি অবরুদ্ধ অঞ্চলটির লাখ লাখ বাসিন্দাদের। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ঘোড়ার মাংস, পচা ভুট্টা থেকে শুরু করে গাছের পাতা সিদ্ধ খেয়েও চলছে কারও কারও দিন।
ইসরাইলের ভয়াবহ তাণ্ডবের পর গাজায় দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। বেকারি থেকে শুরু করে সুপেয় পানির আধারগুলোও ধ্বংস করে দিয়েছে বর্বর ইসরাইলি বাহিনী। বাইরে থেকে পৌঁছাতে পারছে না প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীও। যা দু-একটা দোকান এখনো টিকে আছে-সেখানেও খাবারের দাম বেশ চড়া। অতি মূল্য দিয়ে সেই খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয়। এমন অবস্থায় বাধ্য হয়েই নোংরা পানি এবং পচা খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে হাজার হাজার পরিবার।
অবরুদ্ধ ছোট্ট ভূখণ্ডে ইসরাইল সৃষ্ট এ দুর্ভিক্ষে এমন খবরও সামনে এসেছিল যে-পশুখাদ্য খেয়েও ক্ষুধা মেটাচ্ছে কেউ কেউ।
গাজার এক নারী এএফপিকে জানান, ‘কোনো খাবার নেই, গম নেই, সুপেয় পানি নেই। আমরা প্রতিবেশীদের কাছে টাকার জন্য ভিক্ষা করতে শুরু করেছি। আমাদের বাড়িতে এক শেকেলও (স্থানীয় মুদ্রা) নেই। দরজায় দরজায় কড়া নাড়ছি কিন্তু কেউ আমাদের টাকা দিচ্ছে না।’
খাদ্য সংকটের চলমান এ অবস্থা ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের দিকে নিয়ে যাচ্ছে পুরো অঞ্চলকে। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, গাজার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে রয়েছে। এমনটাই সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া না হলে গাজায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’ হয়ে উঠতে পারে।
জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ইউএনওসিএইচএ) কো-অর্ডিনেশন ডিরেক্টর রমেশ রাজাসিংহাম বলেছেন, এভাবে সংঘাত চলতে থাকলে এবং গাজার দক্ষিণে জনাকীর্ণ এলাকায়ও যখন সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে তখন মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কাজ খুব কমই সম্ভব হবে।
এরপর নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি আরও বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে ২ বছরের কম বয়সি প্রতি ছয় শিশুর মধ্যে এক শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার এবং ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ডের ২৩ লাখ মানুষই কার্যত বেঁচে থাকার জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে অপর্যাপ্ত’ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করছেন।