মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির লড়াইয়ে অন্তত ১২ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)। হামলায় আহত হয়েছেন ৩০ জন। শুক্রবার রাজ্যের হপোন নিও লেইক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে গণহত্যা থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ফলকার টুর্ক।
মঙ্গলবার হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। তাতে বলা হয়, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষে অনেক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে একের পর এক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে সামরিক বাহিনী।
বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষের জেরে গত অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৫৫৪ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আর গত বছরে সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ। সংখ্যাটা এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ জন বেশি।
এমন সময় এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো, যখন মিয়ানমারের অনেক অঞ্চল সামরিক বাহিনীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এ নিয়ে ফলকার টুর্ক বলেছেন, সারা বিশ্বে চলমান নানা সংকটের মধ্যে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে কারও কথা ভুলে যাওয়া হয়নি। মিয়ানমারের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। গত বছরের অক্টোবর থেকে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, আমি মিয়ানমারের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী নাগরিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহস ও সহনশীলতার প্রশংসা করছি। একই সঙ্গে মিয়ানমারে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যেকোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
গতকাল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের এলাকাগুলোয় নতুন করে কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বান্দরবান জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তবর্তী এলাকায় বন্ধ স্কুলগুলো গতকাল খুলে দেওয়া হয়েছে। এর আগে সোমবার তুমব্রু এলাকার বিপরীতে ঢেঁকিবনিয়া বিজিপি সীমান্তচৌকি এলাকায় গোলাগুলির সময় মর্টারশেলের বিস্ফোরিত একটি অংশ শূন্যরেখায় এসে পড়লে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই পরিস্থিতিতে সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশের ঘুমধুমের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।