জিতলে স্বতন্ত্রদের নিয়ে সরকার গঠন করতে চান বিলাওয়াল
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:৫৬ এএম
নির্বাচনে জিতলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে চায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো। ডনের বুধবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের লারকানায় রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। বলেন, ‘আপনি জানেন, সম্ভবত আমাদের ইতিহাসে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ সংখ্যক স্বতন্ত্র রাজনীতিবিদ আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।’ এ কারণেই তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে পছন্দ করবেন বলে উল্লেখ করেন।
সাক্ষাৎকারে বিলাওয়াল ভুট্টো আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ দলের (পিএলএম-এন) নওয়াজ শরিফ মূলত ‘পেছনের দরজা’ দিয়ে অর্থাৎ ভোট ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি অবশ্যই এই ধারণা দিচ্ছেন যে, তিনি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য পাকিস্তানের জনগণ ছাড়া অন্য কিছুর ওপর নির্ভর করছেন।’
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের (পিটিআই) নির্বাচনি প্রতীক ব্যাট বাতিলের পর বেশিরভাগ পিটিআই নেতারা আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর আগে রোববার পিটিআই দলের চেয়ারম্যান ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের পিপিপির নির্বাচনি প্রতীক ‘সিংহ’তে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিলাওয়াল ভুট্টো।
পাকিস্তানে ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ঘিরে দলগুলো তাদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। পিপিপি নেতা বিলাওয়াল ভুট্টোও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। মঙ্গলবার স্যাটেলাইট টাউনের একটি হকি স্টেডিয়ামে নির্বাচনি সমাবেশে বক্তৃতাকালে বিলাওয়াল ভুট্টো বলেন, ‘পুরোনো রাজনীতিবিদ’দের অন্যায়ের কারণে পাকিস্তান ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। যারা প্রতিশোধের রাজনীতি ছাড়া মানুষকে কিছুই দেয়নি।’ পিএলএম-এন পুনরায় ক্ষমতায় এলে নওয়াজ শরিফের প্রতিশোধের রাজনীতি দেশ এবং এর অর্থনীতির ক্ষতি করবে বলে উল্লেক করেন তিনি।
স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য পিটিআইয়ের নেতারাও তাদের নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে মনোনয়ন পাওয়া যেসব প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারণায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তাদের পরিবর্তে ‘উপযুক্ত প্রার্থী’ মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানান পিটিআই নেতা ইমরান খান। সাইফার মামলার শুনানির পর মঙ্গলবার আদিয়ালা কারাগারে সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন। ইমরান খান বলেন, ‘আমি এই ধরনের মনোনীত প্রার্থীদের পরিবর্তে উপযুক্ত প্রার্থী দেব।’ এ সময় তিনি নির্বাচনি এলাকাগুলোতে তার দলের প্রার্থীদের পিটিআই-এর শক্তি প্রদর্শনে বিশাল জনসমাবেশের আয়োজনের আহ্বান জানান। এমনকি আগামী রোববারের মধ্যে পিটিআই নির্বাচনি প্রচারণা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু না হলে তাদের টিকিট বাতিল করা হবে বলেও উল্লেখ করেন।
ইমরান খান বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে বন্দি। মঙ্গলবার পাকিস্তানের লাহোর হাইকোর্ট (এলএএইচসি) ইমরান খানের বিরুদ্ধে সামরিক স্থাপনার সহিংসতার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সাতটি মামলায় জামিন পুনর্বহাল করেছেন।
বিচারপতি আলিয়া নিলুম এবং বিচারপতি ফারুক হায়দারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তোশাখানা মামলায় গ্রেফতার এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সাতটি মামলায় জামিনের বিরোধিতা করে সন্ত্রাসবিরোধী আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খানের আবেদনের শুনানি করে। শুনানি শেষে জামিন পুনর্বহালের আদেশ দেয়। জামিন বহাল থাকলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলেই থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন মামলা থাকার কারণে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে ইমরান খানের বাইরে বের হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁসের মামলায়ও জামিন পেয়েছেন ইমরান খান।’
এদিকে পাকিস্তানের নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মন্ত্রিপরিষদ এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারুল হক কাকার। তার অফিস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্পর্শকাতর নির্বাচনি আসন এবং ভোটকেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। তারা র্যাপিড রেসপন্স ফোর্স হিসাবে ভূমিকা পালন করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ বেসামরিক বাহিনীর পাশাপাশি সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন দেয়। দেশে ট্যাক্স বাড়ানো, ট্যাক্স ও জিডিপির অনুপাতে উন্নতি করায় অর্থমন্ত্রী ড. শামশাদ আখতারের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।