জাপানে কেন মসনদ পান না রাজকুমারীরা
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
ইসরাত জাহান স্বর্না
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম
![জাপানে কেন মসনদ পান না রাজকুমারীরা](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2024/01/23/image-766499-1706029031.jpg)
জাপানের প্রাচীন সমাজব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। এমনকি দেশটির সাম্রাজ্যের উৎসকে ঘিরে তৈরি পৌরাণিক কাহিনীগুলোতেও মাতৃতান্ত্রিক প্রভাবের উচ্চ মাত্রা লক্ষ করা যায়।
সপ্তম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত শুধু নারীরাই নেতৃত্বে ছিলেন। তবে আগের সে নিয়ম আর নেই। রাজপরিবারের শুধু পুরুষ সদস্যরাই সম্রাট হতে পারবেন। এমনকি সিংহাসনের কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী না থাকলেও মসনদে বসার অনুমতি পায় না রাজকুমারীরা।
মূলত তাইকা সংস্কারের (৬৪৫ সাল) পর থেকে দেশটিতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাইকা হলো একটি জাপানি যুগের নাম যেখানে চীনের রাজনৈতিক দর্শনের ওপর ভিত্তি করে কনফুসিয়ান ধারণাকে গ্রহণ করা হয়েছিল। এই যুগে সম্রাজ্ঞী কোগয়েকুর রাজত্বের শেষের দিকে চীন থেকে একটি নতুন তাং রাজবংশ-শৈলীর সামাজিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল দেশটিতে।
একজন নারীকে সিংহাসনে আরোহণের বিরুদ্ধে প্রধান যুক্তিগুলোর মধ্যে একটি হলো সাম্রাজ্যের বংশের ক্ষয়। একজন রানি কোনো সাধারণ পুরুষকে বিয়ে করে সন্তান জন্ম দিলে বংশের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে না-এই যুক্তিতে নারীকে সিংহাসনে আরোহণের অনুমতি দেওয়া হয় না।
যদিও ক্রিসান্থেমাম (জাপানের মসনদ) সিংহাসনে আটজন নারী ইতোমধ্যে রাজত্ব করেছেন। তবে তাদের কেউই রাজত্বকালে বিবাহিত ছিলেন না। এমনকি তাদের সবাইকেই পরিচালনা করতেন একজন পুরুষ।
২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল সম্রাট আকিহিতোর পদত্যাগ এবং পরের দিন জাপানের ১২৬তম সম্রাট হিসেবে তার জ্যেষ্ঠপুত্র নারুহিতোর সিংহাসনে বসার পর থেকে দেশটিতে চলমান সাম্রাজ্য ব্যবস্থা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে পুনরায় বিতর্ক চালু হয়। পুরুষ উত্তরাধিকারীর ঘাটতি হলে সিংহাসনে কে উত্তরাধিকারী হবেন সেই প্রশ্নটি আবারও সামনে আসে।
২০২১ সালে উত্তরাধিকারের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি সরকারি প্যানেলও তৈরি করা হয়। সেই প্যানেলেও দেশের রাজকীয় সিংহাসন পুরুষ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জাপানের সংবিধানে সম্রাটের কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা না থাকলেও এর একটি প্রতীকী ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। এছাড়া এই রাজপরিবারের সদস্যদের সম্রাট সূর্যদেবী আমাতেরাসুর সরাসরি বংশধর বলে মনে করা হয়। বর্তমানে সম্রাট পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যই নারী। এর পরও রাজকুমারীদের মসনদে বসার অনুমতি না দিয়ে পরিবারের দূরবর্তী শাখা থেকে পুরুষদের রাজপরিবারের সদস্যের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে কথা বলছেন অনেকে।