Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

তাইওয়ানের ‘ঘরের লক্ষ্মী’ ছিনিয়ে নিল চীন

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৫ পিএম

তাইওয়ানের ‘ঘরের লক্ষ্মী’ ছিনিয়ে নিল চীন

কামড় খেয়ে ছোবল মারল চীনও। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চীনপন্থি দলকে টপকে ‘এক-চীন’ বিরোধী নেতার জয়ের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাইওয়ানের ‘ঘর’ ভাঙল চীন। 

১৩  দেশ নিয়ে গড়ে তোলা দ্বীপরাষ্ট্রটির ‘কূটনৈতিক সংসার’র এক ‘লক্ষ্মী’কে ছিনিয়ে নিল চীন। ঋণের নেশা ধরিয়ে নাউরুকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল চীন। নাউরু ২১ বর্গকিলোমিটারের ছোট্ট আরেকটি দ্বীপরাষ্ট্র। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ক্ষুদ্রতম দেশটি সোমবার তাইপের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে জোর সমর্থন জানাল বেইজিংকে।

নাউরুর সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক বহু আগের। ১৯৮০-২০০২ সাল পর্যন্ত নাউরু তাইওয়ানের সমর্থক ছিল। তাইপে ছেড়ে আগেও বেইজিংয়ের হাত ধরেছিল নাউরু। তবে সে সম্পর্কটা বেশিদিন টেকেনি। চীনের সঙ্গে নাউরুর সম্পর্ক স্থায়ী হয়েছিল ২০০২-২০০৫ সাল পর্যন্ত। ২০০৫ সাল থেকে ফের তাইওয়ানের সমর্থনে ফিরে আসে নাউরু। 

শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর আবারও তাইওয়ান ছাড়ার ঘোষণা দিল নাউরু। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এদিন জানানো হয়, দেশ ও জনগণের ‘বৃহত্তম স্বার্থে’ তারা চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এর মানে হলো যে, নাউরু প্রজাতন্ত্র আর চীন প্রজাতন্ত্রকে (তাইওয়ান) একটি পৃথক দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেবে না বরং চীনের ভূখণ্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেবে এবং আজ থেকে তাইওয়ানের সঙ্গে ‘কূটনৈতিক সম্পর্ক’ ছিন্ন করবে। পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতে তাইওয়ানের সঙ্গে কোনো অফিশিয়াল সম্পর্ক বা লেনদেন করা হবে না।’ 

নাউরুর এমন ঘোষণার পর সিদ্ধান্তটিকে স্বাগতম জানিয়েছে চীন। হঠাৎই বন্ধুরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন তাইওয়ানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী তিয়েন চুং-কোয়াংও। সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার সুযোগ নিয়ে নাউরুকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে ‘ক্রয়’ করার চেষ্টা করছে চীন। তিনি আরও বলেন, ‘চীন মনে করে যে তারা এই ধরনের পদ্ধতি দিয়ে তাইওয়ানকে দমন করতে পারে, আমি মনে করি এটি ভুল। বিশ্ব তাইওয়ানের গণতান্ত্রিক উন্নয়ন লক্ষ করেছে। 

বেইজিং যদি তাইওয়ানের কূটনৈতিক সম্পর্ক দখল করার জন্য এই ধরনের ঘৃণ্য পদ্ধতি ব্যবহার করতে থাকে তাহলে সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো বিষয়টি স্বীকৃতি দেবে না।’ প্রায় ১২,৫১১ জনসংখ্যা বিশিষ্ট দ্বীপরাষ্ট্র (নাউরু) মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় তাইওয়ানের মাত্র ১২টি সমর্থক দেশ বাকি রইল। 

তাইওয়ানের অবশিষ্ট মিত্র দেশগুলো হলো- গুয়াতেমালা, বেলিজ, হাইতি, প্যারাগুয়ে, সেন্ট কিটস, নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইন্স। পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরে এটি এখনো মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, পালাউ এবং টুভালু দ্বারাও স্বীকৃত। এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সময়কালে তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে নয়টি দেশ। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী সর্বশেষ দেশটি হলো হন্ডুরাস। 

গত বছরের এপ্রিলে দেশটি তাইওয়ানের সঙ্গে ৮২ বছরের পারস্পরিক কূটনৈতিক স্বীকৃতির অবসান ঘটায়। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছে তাইওয়ানের বেশ কিছু মিত্র। তাদের মতে, মূলত আর্থিক প্রণোদনার ওপর ভিত্তি করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশগুলো। এদিকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরে সেখানে একটি রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলকে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে তাইওয়ানকে পাঠানো অভিনন্দনকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন। 

এক বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘তাইওয়ানে নির্বাচিত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাইওয়ানের সঙ্গে শুধু সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখবে, কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্কে জড়াবে না।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রথম চূড়ান্ত সীমারেখা বা রেডলাইন হলো তাইওয়ান।’ এ কারণে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক অভিযোগে জানিয়েছে, তাইওয়ানের সঙ্গে যেকোনো আনুষ্ঠানিকতাকে চীন কঠোরভাবে বিরোধিতা করে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম