Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

শীর্ষ পাঁচ ধনীর সম্পদ দ্বিগুণ, দরিদ্র বাড়ল আরো ৫০০ কোটি

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:৩২ পিএম

শীর্ষ পাঁচ ধনীর সম্পদ দ্বিগুণ, দরিদ্র বাড়ল আরো ৫০০ কোটি

২০২০ সালের পর বিশ্বের পাঁচ ধনীর সৌভাগ্যের চাকা এত দ্রুত ঘুরেছে যে, তাদের মোট সম্পদ দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর এ সময়ে আগের চেয়ে আরও বেশি দরিদ্র হয়েছেন বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ। এ সময়কে ‘বিভাজনের দশক’ উল্লেখ করে সোমবার আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অক্সফাম এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনীর সম্পদ ২০২০ সাল থেকে ফুলেফেঁপে বেড়েছে। এ সময়ে তাদের সম্পদ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এভাবে ধারাবাহিকভাবে তাদের সম্পদ বাড়তে থাকলে পৃথিবীবাসী আগামী এক দশকের মধ্যেই বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার দেখতে পাবে। ‘ইনইকুয়ালিটি অ্যান্ড গ্লোবাল করপোরেট পাওয়ার’ শীর্ষক নতুন প্রতিবেদনে অক্সফাম বলেছে, চলমান এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী ২২৯ বছরেরও দারিদ্র্য নির্মূল করা সম্ভব হবে না।

অক্সফাম জানিয়েছে, গত ৪ বছরে বিশ্বের শীর্ষ ৫ ধনী ফরাসি বিলাসী পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠা লুই ভিতোঁর প্রধান বার্নার্ড আর্নল্ট, আমাজনের জেফ বেজোস, বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট, ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন এবং টেসলার সিইও ইলন মাস্ক। ২০২০ সালের পর তাদের সম্পদ দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বেড়ে ৪০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৮৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এই ৫ ধনকুবেরের সম্পদ প্রতি ঘণ্টায় ১৪ মিলিয়ন ডলার হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে অক্সফাম।

সম্পদশালী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ইলন মাস্ক। তিনি টেসলা, স্পেসএক্স, এক্সসহ (সাবেক টুইটার) বেশ কয়েকটি সংস্থা পরিচালনা করেন। গত বছরের নভেম্বরের শেষ নাগাদ তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৫.৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় ৭৩৭ শতাংশ বেশি।

এরপরের স্থানেই আছেন ফরাসি বিলাসী পণ্যের জায়ান্ট লুই ভিতোঁর চেয়ারম্যান বার্নার্ড আর্নল্ট। তার সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২০ সালের মার্চের তুলনায় ১১১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। 

অন্যদিকে এ সময় ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনের মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের তুলনায় ১০৭ শতাংশ বেশি। আর বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও ওয়ারেন বাফেটের সম্পদ এ সময়ে ৪৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে।

অক্সফাম জানিয়েছে, সামগ্রিকভাবে বিশ্বের সব বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। তাদের সম্পদ মূল্যস্ফীতির হারের চেয়েও তিন গুণ বেশি হারে বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনীদের সম্পদের পাহাড় আরও বাড়লেও একই সময়ে মূল্যস্ফীতি, যুদ্ধ ও জলবায়ু সংকটের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্বের প্রায় ৫ বিলিয়ন অর্থাৎ ৫০০ কোটি মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে।

অক্সফাম জানিয়েছে, সামগ্রিকভাবে বিশ্বের সব বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। তাদের সম্পদ বৃদ্ধির হার বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি হারের চেয়েও তিন গুণ বেশি।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের ১০টি বড় করপোরেশনের মধ্যে ৭টিরই বিলিয়নিয়ার সিইও বা শেয়ারহোল্ডার রয়েছে। যদিও বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান স্থবির রয়েছে। বিশ্বের ৫২টি দেশে প্রায় ৮০ কোটি শ্রমিকের গড় প্রকৃত মজুরি কমেছে। এই শ্রমিকরা গত দুই বছরে সম্মিলিতভাবে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার হারিয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির ১ শতাংশ বৈশ্বিক আর্থিক সম্পদের ৫৯ শতাংশের মালিক। শুধু যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ ব্যক্তি সব আর্থিক সম্পদের ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশের মালিক, যার মূল্য ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ইউরো।

অক্সফাম বলছে তেল ও গ্যাস শিল্প, ওষুধ কোম্পানিসহ বিভিন্ন অর্থায়ন কোম্পানিগুলো বিগত কয়েক বছর ধরেই বেশি মুনাফা করেছে। এ কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান একচেটিয়া মুনাফা করেছে। 

অক্সফাম আমেরিকার ইকোনমিক অ্যান্ড রেশিয়াল জাস্টিজের পরিচালক নাবিল আহমেদ বলেন, একচেটিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সম্পদ নিজেদের মধ্যেই বণ্টন করে। এই প্রক্রিয়াকে অবহেলা করা আমাদের জন্য বিপজ্জনক।’ 

অক্সফাম ইন্টারন্যাশনালের অন্তর্র্বর্তী নির্বাহী পরিচালক অমিতাব বেহার বলেছেন, আমরা বিভাজনের দশক শুরু হতে দেখছি। যেখানে কোটি কোটি মানুষ মহামারি, মুদ্রাস্ফীতি আর যুদ্ধের আঘাতে জর্জরিত অর্থনীতির দায় কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন। 

অন্যদিকে বিলিয়নিয়ার ক্লাসের উন্মেষ ঘটছে। এ বৈষম্য আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা নয়। বিলিয়নিয়ারদের ক্লাসে যারা রয়েছেন তারা যে কোনো মূল্যে নিজেদের সম্পদের পরিমাণ নিশ্চিত করছেন। তিনি মনে করেন, বাজারকে আরও ন্যায্য ও ধনীদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে একচেটিয়া ব্যবসা ভাঙতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ জরুরি।

এক্ষেত্রে কর্মীদের ক্ষমতায়ন করে করপোরেট মুনাফার ওপর কর আরোপ করা উচিত বলেও অমিতাভ জানান। সেই সঙ্গে গণমুখী পণ্য ও পরিষেবায় নতুন বিনিয়োগও জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম