দেশে-দেশে বর্ষবরণের আনন্দ, গাজায় শোক
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:২৭ পিএম
অবশেষে হাজারো ঘাত-প্রতিঘাত, আনন্দ-উল্লাসের স্মৃতিতে বিদায় নিল ২০২৩। নতুন আশা-স্বপ্ন নিয়ে শুরু হলো ২০২৪। হারিয়ে যাওয়া বছরের দুঃখ-দুর্দশা ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে দেশে-দেশে চলছে বর্ষবরণের আনন্দ। বর্ণিল সাজে সেজেছে শহরগুলোর রাস্তাঘাট-অলিগলি। আতশবাজি, কুচকাওয়াজ, গান-নাচে মেতে উঠেছে গোটা বিশ্ব জনপদ। তবে আনন্দ-উল্লাসের এই দিনেও শোকের কালো ছায়ায় ছেয়ে গেছে গাজার আকাশ।
ধ্বংসযজ্ঞ, অভাব, অনিশ্চয়তা এবং স্বজন হারানো বেদনায় শোকে পাথর অবরুদ্ধ অঞ্চলটির প্রতিটি বাসিন্দা। বছরের শেষ দিনটিতেও গাজায় হামলা বন্ধ করেনি নৃঃশংস ইসরাইলি বাহিনী। আতশবাজি দূরের কথা, হয়তো নতুন বছরটিও শুরু হতে পারে ইসরাইলে ভয়ংকর হোয়াইট ফসফরাস বোমা বা ট্যাংক-বন্দুকের গুলিতে! এএফপি, বিবিসি, সিএনএন।
আগের দিন দুপুর থেকেই বর্ষবরণের আমেজ দেখা গেছে বেশ কয়েকটি দেশে। বিশ্বের প্রায় আট বিলিয়নেরও বেশি মানুষ পুরোনোকে ভুলে নতুনকে বরণ করে নিচ্ছে আজ। অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ইন্ডিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে বেশ ঘটা করেই পালন করা হয়েছে দিনটি। তবে আতশবাজির আওয়াজ ও বর্ষবরণের উৎসবে প্রথম মেতে উঠে নিউজিল্যান্ড। অকল্যান্ড শহরের বিখ্যাত স্কাই টাওয়ারকে ঘিরে জড়ো হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় ঘড়ির কাঁটায় ১২টা বাজলেই (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) চিৎকার করে নতুন বছরকে স্বাগত জানান সবাই।
নিউজিল্যান্ডের পরই বর্ষবরণের আমেজ দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ায়। রাজধানী সিডনির হারবার ব্রিজ ও অপেরা হাউজের আশপাশে প্রায় আট টন আতশবাজি জ্বালানো হয়। শুধু রাজধানীতেই প্রায় দশ লাখেরও বেশি মানুষ জড়ো হয়ে বর্ষবরণ উৎসক পালন করেন। কাঠমান্ডুতে গুরং সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নাচ-গানের মাধ্যমে বছরের শেষ দিনটি পালন করেন। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে শিশুরা নতুন বছরকে বরণ করতে ঐতিহ্যবাহী বালিনিজ নৃত্য পরিবেশন করে।
শুধু গাজাতেই ছিল ভিন্ন চিত্র। গোটা বর্ষ নতুন বছরের আনন্দে মাতলেও এদিনও লাশের স্রোতে ভেসেছে গাজা। বছরের অন্তিম দিনেও মৃতের সংখ্যা ছিল ১৫০ জন। অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে গ্রেফতার করা হয় ১৬ জনকে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে ইসরাইলের সহিংসতায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ২২ হাজার এবং আহতের সংখ্যা ৫৬ হাজার ৪৫১ জন। জাতিসংঘ অনুমান অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় দুই মিলিয়ন বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ।
এমনকি ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হওয়ায় গাজায় এখন আর নতুন বছর উদ্যাপনের জায়গা নেই। এত শত দুঃখ-দুর্দশার ভিড়েও এখনও স্বপ্ন দেখেন গাজাবাসী। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে আসা আবেদ আক্কাভি (৩৭) বলেন, ‘এটি একটি ট্র্যাজেডিতে পূর্ণ একটি কালো বছর ছিল’।
দক্ষিণ গাজার রাফাহতে বসবাসকারী আক্কাভি আরও জানায়, ইসরাইলি আক্রমণে তার বাড়ি ধ্বংস করেছে। তার আদরের ভাইও এ যুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তবুও, তিনি ২০২৪ সালের জন্য নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় এই বছর যুদ্ধের অবসান ঘটবে, নতুন বছরটি আরও ভালো হবে, আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারব এবং বাড়িঘরগুলোও পুনর্নির্মাণ করা হবে।’ গাজার পাশাপাশি আপস না হওয়ায় আরও এক বছর পেছাল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তবে এ বছরের শুরুর দিকেই বেশকিছু চমক দেখবে বিশ্ব। ২০২৪ সালে নির্বাচনি বছর হিসাবে প্রায় চার বিলিয়নেরও বেশি মানুষের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভেনিজুয়েলা এবং অন্যান্য দেশে নির্বাচন হবে এ বছর।