আশির দশক থেকে আত্মগোপনে থাকা ভারতের আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিভিন্ন পোস্টে ১৯৯৩ সালে মুম্বাইয়ে বোমা হামলার এ মূল পরিকল্পনাকারীকে পাকিস্তানে অজ্ঞাত কিছু মানুষ গত ১৫ ডিসেম্বর বিষপ্রয়োগ করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এতে বলা হচ্ছে, বিষপ্রয়োগের পর অসুস্থ হয়ে পড়া দাউদ ইব্রাহিম রোববার করাচির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার এ মৃত্যুর খবরে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তান ও ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম; যদিও উৎস যাচাইয়ে এ দাবিটির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। খবর এনডিটিভির
আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিম পাকিস্তানে কয়েক দশক ধরে আত্মগোপনে আছেন বলে ভারত অভিযোগ করলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কখনই তা স্বীকার করা হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা দাউদ ইব্রাহিমের মৃত্যুর বিষয়ে ছড়িয়ে পড়া খবর আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার প্রত্যাশা করছেন।
দাউদ ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবরটি প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার উল হক কাকারের নামে সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম এক্সের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়িয়েছে। যে কারণে দাউদ ইব্রাহিম মারা গেছেন বলে অনেকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসও করছেন। কিন্তু আনোয়ার উল হক কাকারের নামে করা এক্স পোস্টটির ফ্যাক্ট চেকিংয়ে ভিন্ন তথ্য মিলেছে।
আনোয়ার উল হক কাকারের নামে এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মানবতার ত্রাতা, প্রত্যেক পাকিস্তানির প্রাণের আমাদের প্রিয় দাউদ ইব্রাহিম অজ্ঞাত বিষক্রিয়ায় মারা গেছেন। করাচির একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তবে ফ্যাক্ট চেকিংয়ে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নামে করা এ এক্স পোস্টটি ভুয়া। ভাইরাল স্ক্রিনশটটি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তার নাম ব্যবহার করে যে অ্যাকাউন্ট থেকে বার্তাটি ছড়িয়েছে, সেটির সঙ্গে আনোয়ার উল হকের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টের মিল নেই।
এক্সে আনোয়ার উল হকের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বশেষ গত ১৬ ডিসেম্বর পোস্ট করা হয়; যেখানে তিনি কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছিলেন।
সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, কুয়েতের আমির মহামান্য শেখ নাওয়াফ আল আহমদ আল জাবের আল সাবাহ মারা গেছেন। এই খবরে আমি গভীরভাবে শোকাহত। শোকের এ মুহূর্তে কুয়েতের রাজপরিবার এবং কুয়েতের জনগণের প্রতি সংহতি জানায় পাকিস্তান। বিদেহী আত্মাকে আল্লাহ জান্নাতুল ফিরদৌসে সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। পাক-কুয়েত সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়াত আমির সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
অনলাইনে ফ্যাক্ট চেকিং ও বিদ্বেষমূলক বার্তা নিয়ে কাজ করা ভারতীয় সংস্থা ডিজিটাল ফরেনসিক রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স সেন্টার বলেছে, পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টের ইউজারনেইম আনোয়ার কাকার (@anwaar_kakar) লেখা রয়েছে। আর যে অ্যাকাউন্ট থেকে দাউদ ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছে, সেটির ইউজারনেইম আনোয়ার কাক্কার (@anwaar_kakkar)। এখানে কাকার নামের বানানে অতিরিক্ত একটি ‘কে’ (k) যুক্ত করা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, দাউদ ইব্রাহিমের মৃত্যুর খবর দেওয়া এক্স অ্যাকাউন্টটি আনোয়ার উল হকের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট নয়। এটি একটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট। যে কারণে এ খবরের সত্যতা নেই।
কে এই দাউদ ইব্রাহিম?
১৯৫৫ সালে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রেরও মুম্বাইয়ের দোংরি বস্তি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন দাউদ ইব্রাহিম। ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বিস্ফোরণের পর তিনি ভারত থেকে পালিয়ে যান। তখন থেকে তিনি পাকিস্তানে আত্মগোপনে আছেন বলে অভিযোগ নয়াদিল্লির।
১৯৯৩ সালের ১২ মার্চ সিরিজ বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে মুম্বাই। এ বিস্ফোরণে অন্তত ২৫৭ জন নিহত এবং ৭০০ জনেরও বেশি আহত হন। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে প্রায় ২৭ কোটি রুপির সম্পত্তি ধ্বংস হয়।
মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের অনুরোধে বহুল আলোচিত এ বিস্ফোরণ মামলা ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
২০১৭ সালের ১৬ জুন মোস্তফা দোসা এবং আবু সালেমসহ কয়েকজন অভিযুক্তকে এ মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত দাউদ ইব্রাহিমকে মুম্বাইয়ে হামলার মূলহোতা বলে অভিযুক্ত করেন।