খরার দেশে বাগানবিদ্যা
‘ফেলু ছাত্রদের’ হাতে মরক্কো বাঁচানোর মশাল
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫৪ পিএম
মরক্কো গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরার সমস্যায় ভুগছে। সরকারি পূর্বাভাস অনুযায়ী, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে দেশটিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমতে পারে আরও ১১ শতাংশ। পাশাপাশি ২০৫০ সালের মধ্যে মরক্কোর গড় তাপামাত্রা ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এছাড়া দেশটিতে বেকারত্বের সমস্যাও দিন দিন বেড়েই চলেছে। খরাপীড়িত দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মরক্কো বাঁচানোর মশাল এখন ‘ফেলু ছাত্রদের’ হাতে। স্কুল থেকে ঝরে পড়া বেকার ও প্রান্তিক যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মরক্কোর গার্ডেনিং স্কুল ‘বোরেগ্রগ মেড-ও-মেড’। স্পেন-ভিত্তিক ইসলামিক কালচার ফাউন্ডেশন (এফইউএনসিআই) ২০১৮ সালে মরক্কোতে সর্বপ্রথম এ ধরনের স্কুল চালু করে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য এতে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, অন্যদিকে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়া বাগান ব্যবসার মাধ্যমে শুকিয়ে যাওয়া মরক্কো নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতা তৈরি- এই ত্রিমুখী লক্ষ্য নিয়ে উদ্যানবিদ্যা স্কুলটি কাজ করে। জটিল পারিবারিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এমন ৯০ জন শিক্ষানবিশকে ফি বছর উদ্যানবিদ্যায় ৩ বছরের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। আর এতে মরক্কোর পানির সংকটের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এমনকিছু স্থানীয় গাছপালার নার্সারিও রয়েছে।
উদ্যানবিদ্যা স্কুলটি মরক্কোর রাজধানী রাবাত ও পার্শ্ববর্তী শহর সালের মধ্যবর্তী পেরিউরবান এলাকায় বোরেগ্রেগ নদীর তীরে অবস্থিত। একটি পুরোনো ল্যান্ডফিলের কাছে ৮ হেক্টর মাঠের ওপর স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর অর্থায়নের জন্য এটি মূলত ইনিশিয়েটিভ ন্যাশনাল পাওয়ার লে ডেভেলপমেন্ট হিউম্যান (আইএনডিএইচ), দ্য এনড্রেড ন্যাশনাল ও দেশের উচ্চতর শিক্ষা ও পেশাগত গঠন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে।
কিশোর বয়সে মরক্কোর স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলেন হিন্দ বেন্সবিটিয়া (২০)। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ছাড়ার পর বাড়িতে বেকার থেকেছেন দুই বছর। এতদিন বাড়িতে বসে সময় কাটালেও বর্তমানে তিনি তার ভবিষ্যৎ গড়ছেন এই উদ্যানবিদ্যা স্কুলটিতে। তিনি বলেন, ‘আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। আমি কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। এরপর আমি যখন এই স্কুলে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করি তখন নিজের ভবিষ্যতের পাশাপাশি পরিবর্তন দেখছি আশপাশের পরিবেশেরও।’
এ বিষয়ে বেন্সবিটিয়া বলেন, ‘আমি এই কাজে যুক্ত হব তা কখনো ভাবিনি। এই প্রশিক্ষণ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এখন আমি পরিবেশকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তাকে অন্যভাবে দেখছি।’
বোরেগ্রগ মেড-ও-মেড প্রতিষ্ঠানটির যোগাযোগ পরিচালক ইনেস এলেক্সপুরু বলেন, ‘বাগানের মডেলটি সম্পূর্ণরূপে পরিবেশগত। এখানের ভবনটিও বায়োক্লাইম্যাটিক। কাঁচামাটি দিয়ে তৈরি। আর এখানে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়।’ স্কুলটি ‘একটি অনিয়মিত অভিবাসন রোধেও’ অবদান রাখে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এলেক্সপুরু আরও বলেন, ‘এখানে যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ শতাংশই বেকারত্বের সমস্যায় ভুগছিলেন এমন নারী। আমাদের দেশের সবার মাঝে সাধাণরত এমন ধারণা ছিল যে, বাগানের কাজে সবসময় পুরুষরাই জড়িত থাকবে। কিন্তু এখন এই ধারণাগুলো পরিবর্তন হচ্ছে।’
এই স্কুলের আরেকজন প্রশিক্ষণার্থী লাউবনা নাসিফ (১৭)। তিনি বলেন, ‘নারীদের কাজ নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ধরনের গৎবাধা ধারণা আছে। কিন্তু এখন সবকাজে তাদের এগিয়ে গিয়ে ধারণাগুলোকে ভুল প্রমাণিত করতে হবে।’
এররাহিমি (১৬) নামের আরেক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, ‘প্রশিক্ষণের পর আমি ব্যক্তিগতভাবে বাগান ব্যবসা শুরু করার আশা করছি।’