দুবাইয়ে কপ-২৮ সম্মেলন
মুখ খুললেও মুঠ বন্ধ
ইসরাত জাহান স্বর্না
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
জাতিসংঘ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনগুলোকে আদতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে শুধুমাত্র বুলি আওড়ানোর একটি রঙ্গমঞ্চ বলে মনে করেন সুইডেনের পরিবেশ কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের এক র্যালিতে এ মন্তব্য করেন তিনি। সে বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ইতালি রাজধানী মিলানের ‘ইয়ুথ ক্লাইমেট সামিট’র মঞ্চে সেই তিরস্কারটিই আরও জোরালো করে বিশ্বনেতাদের গায়ে। মুখের উপরই বলেন, গত ৩০ বছর ধরে শুধু মুখই বাজিয়ে গেছেন নেতারা, কাজের কাজ কিছুই করেননি।
আরব আমিরাতের দুবাইয়ে শুরু হওয়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের কপ-২৮ আকাশেও সেই একই মেঘ! জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বার্ষিক ৪০ হাজার কোটি ডলার চাহিদার বদলে মাত্র ৭০ কোটি ডলার দেওয়ার ‘দুঃসাহসিক’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বনেতারা। ২০ বছর বয়সি গ্রেটার সুরে বললে, দিন শেষে এবারের সম্মেলনও আসলে সেই ‘ব্লা ব্লা ব্লা’। স্যুট-টাই পরে শুধু মুখেই মুখেই জলবায়ু উদ্ধার! বাস্তবায়নের বেলায় ঠন..ঠনা..ঠন। সহায়তার কথা এলেই আর মুঠ খুলবে না।
কপ-২৮ শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনেই উন্নত দেশগুলো লস ও ড্যামেজ তহবিলে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়। যদিও তাদের এই প্রতিশ্রুতি প্রয়োজনের তুলনায় খুব নগণ্যই বলা চলে। কারণ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটিরও বেশি ধরেছে। এই তহবিলে আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জার্মানি ১০ কোটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই দুই দেশের পরই সবচেয়ে বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুত দিয়েছে ইতালি ও ফ্রান্স। ১০ কোটি ৮০ লাখ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এই তহবিলে মাত্র এক কোটি ৭৫ লাখ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বিষয়ে দুই হাজার জলবায়ু গোষ্ঠীর জোট ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক রাজনৈতিক কৌশলের প্রধান হারজিৎ সিং বলেন, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলে প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় দূষণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব দুর্দশার প্রতি অবিরাম উদাসীনতার ইঙ্গিত দেয়।’
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান লস অ্যান্ড ডামেজ তহবিলে এক কোটি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই তহবিলে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া অন্যান্য দেশের মধ্যে ডেনমার্ক দেবে পাঁচ কোটি ডলার। আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেবে দুই কোটি ৭০ লাখ ডলার, নরওয়ে দেবে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার। কানাডার এই সহায়তায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া অর্থের পরিমাণ এক কোটি ২০ লাখ ইউএস ডলার, স্লোভেনিয়া দেবে ১৫ লাখ ইউএস ডলার। ওই দেশগুলোর এই তহবিলে সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করছেন জলবায়ু বিশ্লেষকরা। আর এটি ‘ঋণ নয় বরং অনুদান হিসাবে’ দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা।