Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

আল-শিফা হাসপাতালে অস্ত্র উদ্ধার ‘সাজানো নাটক’

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম

আল-শিফা হাসপাতালে অস্ত্র উদ্ধার ‘সাজানো নাটক’

হামাসের সদর দপ্তর চিহ্নিত করে গাজা উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালে হামলা চালানোর অজুহাতটি নিয়ে এবার শোরগোল শুরু হয়েছে পশ্চিমা গণমাধ্যমেও। অভিযানে আল-শিফা হাসপাতাল থেকে হামাসের ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি। গাজার সবচেয়ে বড় এ হাসপাতালটিতে বুধবার থেকে বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে ইসরাইলি বাহিনী। শনিবার আরও হিংস্রকণ্ঠে ১ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে থাকা সব রোগী, চিকিৎসক ও উদ্বাস্তুদের হাসপাতাল ছাড়ার আলটিমেটাম দেয় ইসরাইল। মৃত্যৃ-আতঙ্ক মুহূর্তে থমথমে অবস্থা ছড়িয়ে পড়ে পুরো হাসপাতালে। ভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে পালাতে শুরু করে শত শত রোগী। হাসপাতালের নিচে হামাসের বিস্তৃত টানেল ও কমান্ড সেন্টার আছে, এই দাবিতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল।

গাজায় হামলা শুরুর ২০ দিনের মাথায় (২৭ অক্টোবর থেকে) ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) আল-শিফা হাসপাতালের একটি গ্রাফিকস ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে আল-শিফার নিচে হামাসের বিস্তৃত টানেল ও কমান্ড সেন্টার (সদর দপ্তর) দেখানো হয়েছিল। তবে বুধবার অভিযানের পর সেই কথিত কমান্ড সেন্টারের কোনো শক্তিশালী তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেনি ইসরাইল। আল-শিফা হাসপাতালে হামাসের কিছু অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে নতুন আরেকটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে ইসরাইল। তাদের প্রকাশ করা বিভিন্ন ভিডিও আর তাদের দাবি অনুযায়ী উদ্ধারকৃত অস্ত্রের চুলচেরা বিশ্লেষণে দেখা গেছে পুরোটাই ছিল সাজানো নাটক। আইডিএফ হাসপাতাল থেকে যেসব অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করছে তার বেশিরভাগই অ্যাসল্ট রাইফেল।

ইসরাইলের প্রকাশিত অস্ত্র উদ্ধারের ভিডিও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিবিসির এক বিশ্লেষক জানিয়েছেন, সাংবাদিককে দেখানো আল-শিফা হাসপাতালের এমআরআই মেশিনের পেছন থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের ব্যাগটি সাংবাদিক আসার কয়েক ঘণ্টা আগে স্কচট্যাপ দিয়ে প্যাঁচানো হয়েছিল। এছাড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, যে পরিমাণ অস্ত্র ব্যাগে থাকার কথা তার চেয়ে বেশি অস্ত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

আইডিএফ আরও দাবি করেছে, আল-শিফার ভেতর থেকে তারা যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তাতে কোনো এডিট করা হয়নি। পুরো ভিডিও একবারে ধারণ করা হয়েছে। তবে তাদের প্রকাশিত ভিডিওতে এডিট আছে বলে তথ্য উঠে এসেছে বিবিসির বিশ্লেষণে।

আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, হামলার আগে ইসরাইল যে গ্রাফিকস ভিডিওটি প্রকাশ করেছিল সেটিতে দেখানো হয়েছিল, হাসপাতালের অনেক নিচে হামাসের কমান্ড সেন্টার অবস্থিত। হয়তো তারা সেখানে এখনো পৌঁছাতে পারেনি। তবে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের দেখানো প্রমাণ তেমন বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে যেসব প্রমাণই দেখানো হোক না কেন সেগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে তীব্র সন্দেহ থাকবে।

হাসপাতালে হামলা এবং এটির ভেতর হামাসের সামরিক অবকাঠামো না পাওয়ার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যদি ইসরাইলিরা কোনো কিছু না পায় তাহলে তারা জেনেভা কনভেনশনের চুক্তি ভঙ্গ করেছে। জেনেভে কনভেনশন চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, হাসপাতাল যদি বড় কোনো সামরিক হুমকি না হয় তাহলে এটিতে হামলা চালানো যাবে না। উলটো হাসপাতাল রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে।

হাসপাতালে হামলার কারণে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার তদন্ত হবে। যদিও এসব তদন্ত এবং এটির রায় প্রকাশের বিষয়টি অনেক সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ইসরাইল এতে ফেঁসে যাবে।

অন্যদিকে হাসপাতালের নিচে হামাসের সামরিক কমান্ড থাকার দাবি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ওসামা হামদান।  বৃহস্পতিবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইসরাইলি অভিযোগ নাকচ করেন। এ সময় তিনি প্রমাণ হিসাবে সাম্প্রতিক কিছু ফুটেজ তুলে ধরেন।

এসব ফুটেজে দেখা যায়, আল-শিফা হাসপাতালের বিভিন্ন পয়েন্টে ইসরাইলের সেনারা অস্ত্র রাখছে। পরে তারাই আবার সেখানে অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করে এবং সেগুলো হামাসের অস্ত্র বলে চালিয়ে দেয়। হামদান এসব ফুটেজ দেখিয়ে বলেন, ইসরাইলি সেনারা সেখানে ত্রাণবক্সে অস্ত্র ভরে রেখে পরে সেই অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করে হামাসকে অভিযুক্ত করছে। ইসরাইল এরই মধ্যে গাজার বহু সংখ্যক হাসপাতাল এবং স্কুলে বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। গাজার এই আল-শিফা হাসপাতালেও তারা বোমা হামলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম