ধসে পড়া ভবনগুলোতে এখনো চাপা পড়ে আছে ১,২০০ জন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৪ পিএম
ইসরাইলের একের পর এক হামলায় গাজা এখন মৃত্যুপুরী। বিমান, বোমা ও অস্ত্রো-বারুদে ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে ৪১ কিমি. দৈর্ঘ্যরে ছোট্ট উপত্যকাটি।
ইট পাথরের দালানগুলো ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে। ধসে পড়া সেসব ভবনের নিচ থেকেই ভেসে আসছে চিৎকার। ধ্বংস্তূপের ভেতর থেকে আসা সেসব আওয়াজে গাজার আকাশ আরও ভারী হয়ে উঠেছে।
ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধার কাজে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না-এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় এক চিকিৎসক।
কেননা ভারী ভারী ধ্বংসাবশেষ তোলার জন্য গাজায় কোনো ভালো যন্ত্রপাতি নেই। ফলে সম্পদ ও সক্ষমতার অভাবেও মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। খবর আলজাজিরা, এপির।
ইসরাইলের অবিরাম বোমাবর্ষণের মধ্যে গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন ডাক্তার আহমেদ শাহীন।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বোমাবাজি এখনো চলছে, থামছে না। তারা চারদিক থেকে বোমাবর্ষণ করছে। ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে পড়া লোকজনকে বাঁচানো যাচ্ছে না। আমরা তাদের চিৎকার শুনতে পাই, কিন্তু কিছুই করতে পারি না। হাসপাতালগুলো আহত, মৃতে ভর্তি। রেফ্রিজারেটরে লাশ রাখার জায়গা নেই। এ ভীতিকর পরিস্থিতি বর্ণনা করা যাবে না।’
দক্ষিণ গাজার খান ইউনুসের বাসিন্দা ইউমনা এলসাইদ। তিনি বলেন, যুদ্ধের আগেও গাজা সব সেক্টরে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব ছিল। ধ্বংসস্তূপ অপসারণ, পরিষ্কার এবং লোকজনকে বের করার জন্য এখন পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের বাঁচাতে যন্ত্রপাতির জন্য জরুরি আবেদন করেছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত বেসামরিক নাগরিকরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খালি হাতে মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
গাজা শহরের বাসিন্দা ৩৭ বছর বয়সি আলী আহাদ বলেন, ‘উদ্ধার কাজে আমাদের মতো লোকেরা হাত ব্যবহার করে এবং আমাদের এ ধরনের কাজ করার জন্য যন্ত্রপাতি, অভিজ্ঞতা এবং সামর্থ্য নেই।’
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রায় এখনো ১,২০০ জন মানুষ চাপা পড়ে আছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
ইসরাইলিদের পালটা আক্রমণের পর থেকে গাজায় কমপক্ষে এক হাজার ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।
ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল (ডিসিআই) বলেছে, ‘ইসরাইলি বাহিনী তাদের বিমান হামলা শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতি ১৫ মিনিটে একজন ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করেছে। এই যুদ্ধের প্রভাবে আমাদের বেসামরিক নাগরিক এবং আমাদের সন্তানরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হবে।’
অবরুদ্ধ গাজাতে আরেক দিকে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। খাবারের দোকানগুলোতে মানুষের লম্বা সারি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে খাবার জোগাড় করতে হচ্ছে।
গাজাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেফাত আলিরের বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে সুপার মার্কেট এবং স্টোরগুলো দ্রুত খালি হয়ে যাচ্ছে। আমাদের এলাকায় আগের চেয়ে অনেক বেশি লোক রয়েছে এবং একই সঙ্গে দোকানে নতুন পণ্য আসছে না। তবে খাদ্য বেশি পাওয়া গেলেও, এটি কেনার ‘চেষ্টা করা খুব বিপজ্জনক’ হবে।
চলমান এ সংঘাতে ইসরাইলের বিপক্ষে সবচেয়ে কড়া সমালোচনা করেছে তুরস্ক। আঙ্কারার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ইসরাইলের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে ‘চুরি’নীতি বলে অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, “আপনি একটি জনগণের জমিতে আক্রমণ করেন, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করেন, তাদের বিদায় করেন এবং নতুন লোক আনেন এবং তারপর এটিকে ‘পুনর্বাসন’ হিসাবে চালিয়ে দেন। এই জাতীয় নীতিগুলোকে ‘চুরি’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা উচিত।”