ইসরাইলে হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ কে এই মোহাম্মদ দেইফ
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৫১ পিএম
মোহাম্মদ দেইফ। ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলের গর্ব করার মতো নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ধসিয়ে দিয়ে শনিবার সেখানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের সংগঠন হামাস। সম্ভাব্য কঠোর পরিণতি জানা সত্ত্বেও এ হামলা চালিয়ে শুধু ইসরাইল নয়, পুরো বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছেন হামাসের সদস্যরা। ইসরাইল বলছে, হামাসের এ হামলা অনেকটা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের জোড়া ভবনে আল–কায়েদার হামলার মতো।
হামলার পর অনেকরই প্রশ্ন—সীমিত সক্ষমতা নিয়ে এত বড় পরিসরে হামলা কীভাবে চালাল হামাস? সংগঠনটির শক্তিমত্তা আসলে কোথায়? এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড আসলে কে?
শনিবারের হামলাকে আল–আকসার বন্যা বা আল–আকসা ফ্লাড বলে উল্লেখ করেছে হামাস। ইসরাইলের ভূখণ্ডে মাত্র ২০ মিনিটে হামাসের হাজার পাঁচেক রকেট নিক্ষেপের পরপরই একটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে কথা বলতে শোনা যায় হামাসের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফকে। ইসরাইলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় তার নাম রয়েছে। দেইফ বলেন, এ হামলার মধ্য দিয়ে জেরুজালেমে আল–আকসা প্রাঙ্গণে ইসরাইলের অভিযানের প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে।
মক্কা ও মদিনার পর আল–আকসা মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র জায়গা। ২০২১ সালের মে মাসে আল–আকসায় অভিযান চালায় ইসরাইল। হামাসের সূত্র জানায়, ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। তখন থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন দেইফ।
হামাসের ওই সূত্র জানায়, পবিত্র রমজান মাসে টানা ১১ দিনের লড়াইয়ে আল–আকসা প্রাঙ্গণে তরুণ–বয়স্কদের হত্যা করা হয়েছিল। ওই ঘটনা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার করে। প্রতিশোধের আগুন উসকে দেয়। দুই বছরের বেশি সময় পর এসে ওই ঘটনার প্রতিশোধ নিয়েছে হামাস।
হামাসের কমান্ডার দেইফকে হত্যা করতে সাতবার চেষ্টা চালিয়েছে ইসরাইল। সর্বশেষ চেষ্টাটি ছিল ২০২১ সালে। তবে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। দেইফ সচরাচর প্রকাশ্যে আসেন না, কথা বলেন না। গত শনিবার হামাস–নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেলে যখন ঘোষণা দেওয়া হয় যে মোহাম্মদ দেইফ কথা বলবেন; তখন ফিলিস্তিনিরা বুঝে গিয়েছিলেন, নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা ঘটেছে।
১৯৭৩ সালে আরব–ইসরাইল যুদ্ধের পর আর কখনোই ইহুদি রাষ্ট্রটিকে নিজেদের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে এতটা চ্যালেঞ্জ ও উদ্বেগের মুখে পড়তে হয়নি।
শুরুতে কিছুটা হকচকিত হয়ে পড়লেও দ্রুত ফিলিস্তিনের গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরাইল। দেশটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করে হামাসের বিরুদ্ধে। সেই থেকে গাজায় মুহুর্মুহু হামলা চালানো হচ্ছে। এসব হামলায় গাজায় ধসে পড়ছে একের পর এক স্থাপনা। দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। প্রাণ গেছে নারী ও শিশুসহ ৯০০–এর বেশি মানুষের। যুদ্ধ শুরুর পর গাজাকে কার্যত অবরোধ করে রাখা হয়েছে।
রেকর্ড করা অডিও বার্তায় জাতির উদ্দেশে দেইফ বলেন, আজ আল–আকসার আবেগের দিন, আপনাদের (হামাস যোদ্ধা) আবেগের দিন। আজ অপরাধীদের বুঝিয়ে দেওয়ার দিন, তোমাদের সময় শেষ হয়ে গেছে।
ইসরায়েলিদের বিশ্বাস, গত শনিবারের আকস্মিক ও ব্যাপক হামলার মূল পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নকারী মোহাম্মদ দেইফ।
মোহাম্মদ দেইফ হামাসের সামরিক শাখা আল–কাসেম ব্রিগেডের কমান্ডার। হামাস–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শনিবারের হামলার পেছনে দেইফ ও ইয়াহিয়া সিনওয়ার একসঙ্গে পরিকল্পনা করেছেন। সিনওয়ার গাজায় হামাসের নেতা। তবে এটা ঠিক যে হামলার পেছনে দুটি মস্তিষ্ক কাজ করেছে। কিন্তু মূল ‘হোতা’ বা মাস্টারমাইন্ড একজনই। সেটা দেইফ।
এ জন্য পাল্টা আক্রমণ শুরু করার পর দেইফের পরিবারের ওপর চরম প্রতিশোধ নিয়েছে ইসরাইল। গাজায় বিমান হামলায় দেইফের বাবা, এক ভাই এবং তার পরিবারের আরও দুই সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। হামাস–সংশ্লিষ্ট সূত্রটি হামলা ও নিহত হওয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
হামাস–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইসরাইলের পক্ষ থেকে হত্যাচেষ্টায় দেইফ একটি চোখ হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে ইসরাইলের বিমান হামলায় দেইফের স্ত্রী, সাত মাসের পুত্রসন্তান এবং তিন বছর বয়সী মেয়ের মৃত্যু হয়।
সূত্রটি আরও বলছে, ইসরাইলের শত্রু এবং হামাসের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও সহায়তাকারী ইরান ব্যাপক পরিসরের এ হামলার খবর আগে থেকে জানত। কিন্তু হামাসের পক্ষ থেকে তেহরানকে কখনোই হামলার সময়–স্থান সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। আর এ কারণে আকস্মিক এ হামলার পরিধি ও ভয়াবহতা ইসরাইলসহ সবাইকে হতবাক করে দেয়।