ট্রুডো ও খালিস্তান: কানাডার উদার গণতন্ত্রের স্বরূপ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৪ পিএম
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-কানাডা সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। গত সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো হাউস অব কমন্সে বলেন, কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের এজেন্টদের জড়িত থাকার ‘প্রমাণ’ রয়েছে। চলতি বছরের জুনে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার একটি শিখ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের বাইরে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন খালিস্তান টাইগার ফোর্সের (কেটিএফ) সদস্য নিজ্জারকে অনেক আগেই ভারত ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করেছে। ২০১৮ সালে পাঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর কাছে যে নয় জন আসামির তালিকা প্রদান করেছিলেন সেখানে তার নামও ছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রুডোর সাম্প্রতিক অভিযোগগুলো সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে ‘অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করেছে। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) সাবেক প্রধান বলেন, এ দাবি ‘একেবারেই উদ্ভট’। অভিযোগের প্রমাণ এখনও ভারতের কাছে সরবরাহ করেনি কানাডা।
ট্রুডো সরকারকে এখন জনসম্মুখে এ অভিযোগের প্রমাণ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, যদি অভিযোগগুলো সত্য প্রমাণিত হয় তবে এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের একটি বড় লঙ্ঘন হবে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারের কাছে যদি এখনো জোরালো প্রমাণ না থাকে, তাহলে তিনি কেন এমন মন্তব্য করলেন, যা কেবল ভারত-কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে না, অন্যান্য অনেক বিষয়কে প্রভাবিত করবে।
এটা হতে পারে যে, ট্রুডো ক্ষমতায় টিকে থাকার সঙ্গে এ ঘটনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা ট্রুডো ২০২৫ সাল পর্যন্ত নিজেকে ক্ষমতায় রাখতে বিরোধী দল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) সঙ্গে একটি আকস্মিক চুক্তি করেন। এনডিপির নেতৃত্বে রয়েছেন জগমিত সিং, যিনি খালিস্তানি আন্দোলনের সমর্থক বলে জানা গেছে।
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত কিনা তা নির্ধারণের জন্য আয়োজিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ট্রুডো ভারতে থাকাকালীন কানাডায় একটি অদ্ভুত গণভোটের ঘটনা ঘটেছে। গণভোট সাধারণত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের বাসিন্দাদের মতামত জানার জন্য হয়ে থাকে। তবে কানাডায় ঘটে যাওয়া এ ঘটনা সত্যিই বিস্ময়কর।
ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের সহিংসভাবে হত্যাকারী খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দিচ্ছে কানাডা। ১৯৮২ সালে ভারত সরকার খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ‘বাব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল’র প্রধান তালবিন্দর সিং পারমারকে প্রত্যর্পণের জন্য কানাডা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু কানাডা সরকার প্রত্যর্পণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। কয়েক বছর পর, তালবিন্দর সিং পারমার এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৮২ কনিষ্কে বোমা হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং তা কার্যকর করেছিলেন। ওই হামলায় ৮২ শিশু এবং ছয় নবজাতকসহ ৩২৯ জন নিহত হয়েছিল।
এখন পর্যন্ত ন্যাটোর কোনো মিত্রই কানাডার দাবি সমর্থন করেনি বা বৈধতা দেয়নি। কানাডার এ অভিযোগের ফলে ভারত-কানাডা সম্পর্কের অন্যান্য দিকগুলোও তিক্ত হয়ে যাবে তা অনিবার্য। সম্প্রতি দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভাবিত হয়েছে এবং দিল্লি কানাডার সঙ্গে একটি বিস্তৃত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) জন্য আলোচনা স্থগিত করেছে।
ভারত সরকার বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নির্বাসনের জন্য কানাডার কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে। আমরা শুধু আশা করতে পারি, কানাডার ওয়ান্টেড অপরাধীদের নির্বাসনে অনীহা এবং তার উদারনীতির ফলে ১৯৮৫ সালের এয়ার ইন্ডিয়া বোমা হামলার মতো আরেকটি মারাত্মক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটবে না।
সূত্র: পলিশিয়া রিসার্চ ফাউন্ডেশন
লেখক: সঞ্জয় পুলিপাকা ও মোহিত মুসাদ্দি
অনুবাদ: সজীব হোসেন