ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব: কে এই হরদীপ সিং নিজ্জর
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৬ এএম
হরদীপ সিং নিজ্জর
কানাডার সারে শহরের একটি গুরুদুয়ারার সামনে গত ১৮ জুন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন হরদীপ সিং নিজ্জর। যার মৃত্যুতে কানাডায় বসবাসরত শিখ সম্প্রদায় ও খালিস্তানপন্থিদের মধ্যে ছড়ায় উত্তেজনা। এ ইস্যুতে সোমবার সরাসরি নয়াদিল্লিকে দায়ী করেন ট্রুডো। তিনি বলেন, ভারত সরকারের মদতে হয়েছে এ হত্যাকাণ্ড। যার ধারাবাহিকতায় পরস্পরের কূটনীতিককে বহিষ্কার করে ভারত ও কানাডা।
জানা গেছে, ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি তালিকায় নাম ছিল হরদীপ সিং নিজ্জরের। তার মাথার দাম ছিল ১০ লাখ রুপি। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করেছিল জাতীয় তদন্তকারী দল (এনআইএ)।
খালিস্তানি নেতার খুনের পেছনে ভারতীয় এজেন্টের যোগসূত্রের অনুমান করছেন কানাডার গোয়েন্দারা। চলতি বছরের ১৮ জুন খালিস্তানি টাইগার ফোর্সের (কেটিএফ) প্রধান নিজ্জরকে কানাডার একটি গুরুদ্বারের বাইরে দুই অজ্ঞাত পরিচয় হামলাকারী গুলি করে খুন করে। এই হরদীপ সিং নিজ্জর আবার ছিলেন গুরুদ্বারের সভাপতিও। ১৯৭৭ সালে জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে কানাডায় আশ্রয় নেন খালিস্তানি নেতা। সেখানে গিয়ে একজন কানাডার নারীকে বিয়ে করেন। নিজ্জরকে ২০২০ সালে ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করে।
ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, নিজ্জর নিষিদ্ধ সংগঠন খালিস্তানি টাইগার ফোর্সে কম বয়সিদের নিয়োগ করত এবং তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিত। তরুণদের মগজধোলাই করে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিত হরদীপ। বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন শিখস ফর জাস্টিসের (এসএফজে) সঙ্গেও হরদীপ সিং নিজ্জর যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়।
হরদীপের বিরুদ্ধে এআইএর চারটি মামলা ছিল। এক হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রসহ খালিস্তানি যোগের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। গত বছর জুলাইতেই হরদীপের মাথার দাম ১০ লাখ টাকা ধার্য করেছিল এনআইএ।
জানা যায়, হরদীপ খালিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান ছিলেন। গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের ‘শিখস ফর জাস্টিস’ সংগঠনের মতামত প্রচারের দায়িত্ব ছিল হরদীপের টাইগার ফোর্সের ওপর। হরদীপের এই সংগঠনের দাবিতেই খালিস্তানের পক্ষে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল কানাডায়। কানাডায় বসবাসকারী প্রায় সাত হাজার শিখ তাতে অংশ নিয়েছিলেন।
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই গণভোটে হাজির ছিলেন এসএফজের প্রতিষ্ঠাতা গুরপতবন্ত সিংহ পান্নুন। গত বছরের নভেম্বরে কানাডার অন্টারিওতে জমায়েত এবং গণভোটের ডাক দিয়েছিল। সেই উদ্যোগকে সরাসরি ‘জঙ্গি কার্যকলাপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল নয়াদিল্লি। কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো কূটনৈতিক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সে দেশের মাটি ব্যবহার করে ভারত বিভাজনের চেষ্টা শুরু করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। কিন্তু তার পরেও আয়োজিত হয়েছিল গণভোট।
২০১৮ সালে পাঞ্জাবের তৎকালীল মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের একটি তালিকা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টি ট্রুডোর কাছে তুলে দিয়েছিলেন। সেখানে হরদীপ সিং নিজ্জরেরও নাম ছিল। ২০১৭ সালে পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে বিস্ফোরণে নিজ্জরের হাত ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। বিস্ফোরণে ৪২ জন আহত হন।
আরও পড়ুন: রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বকে এক হওয়ার আহ্বান জেলেনস্কির
এর আগে, ২০১০ সালে পাতিয়ালার একটি মন্দিরের কাছে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় ব্রিটেনের খালিস্তানি নতা পরমজিং সিং পামা জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। নিজ্জরের নির্দেশেই সেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল বলে অনুমান ভারতীয় গোয়েন্দাদের।