ধ্বংসস্তূপ থেকে ভেসে এলো নবজাতকের কান্না
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৮ পিএম
মরক্কো এখন মৃত্যুপুরী। ভয়ংকর ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ৬ প্রদেশের বিভিন্ন গ্রাম। পুরাতন শহরের ভেতরে-বাইরে চারদিকে পড়ে আছে ইট-পাথরের ধ্বংসস্তূপ। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ভবনগুলোর তলায়, ফাঁকফোকরে পড়ে আছে বহু প্রাণ। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে রক্তাক্ত লাশ। বাতাসে স্বজন হারানোর কান্না আর চিৎকারের রেশ যেন মরক্কোর মাটিকে ভূমিকম্পের মতোই কাঁপিয়ে তুলছে বারবার। মাত্র ২০ সেকেন্ডেই মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে একেকটি গ্রাম। সেই উপত্যকার মধ্যেই চলছে জীবনের খোঁজ। জরুরি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারীর দল প্রাণপণে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। জোরদারভাবে চলছে উদ্ধারকাজ। বড় হাতুড়ি, ড্রিল মেশিন দিয়ে চলছে দেওয়াল ভাঙার কাজ।
শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই মরক্কোজুড়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। কেঁপে ওঠে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা। রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৬.৮। এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯ জনে। এদের মধ্যে ১ হাজার ৪০৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মারাকেশ, আল-হাউজ, উয়ারজাজেট, আজিলাল, চিচাওয়া ও তারউদান্ত প্রদেশগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছে। এর মধ্যে আল-হাউজ প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ১২৯৩ জন মারা গেছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে তারউদান্ত প্রদেশ। যেখানে ৪৪২ জন মারা গেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ধ্বংসস্তূপে নিচে এখনো অনেক লাশ চাপা পড়ে আছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আটকাপড়াদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা সদস্যরা রাতারাতিই ছুটে যান ধ্বংস স্থানে। বিশেষ করে গ্রামগুলোতে। ভূমিকম্পের ধ্বংসাবশেষের ফলে গ্রামীণ পথগুলো অবরুদ্ধ হওয়ায় কেন্দ্রস্থল আটলাস পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত গ্রামগুলোতে প্রবেশ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও ছুটছেন জীবন বাঁচাতে। মরক্কোর মারাকেশে মৃতের স্তূপ থেকে ভেসে আসে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ।
রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, মৃত্যু উপত্যকা থেকেই সদ্যোজাত শিশুকে উদ্ধার করলেন এক ব্যক্তি। তবে তিনি উদ্ধারকর্মী নন। নবজাতকের নাভিতে তখনও লেগে ছিল আম্বেলিকাল কর্ড। শিশুটির মা-কে খুঁজে পাওয়া গেছে কিনা সে সম্পর্কে ভিডিওতে কিছু বলা হয়নি। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ আগে বাড়িটির ছাদেই জন্ম হয় শিশুটির। ফলে বাড়ি নিচের দিকে ধসে পড়লেও নবজাতক সেভাবে ছাদে চাপা পড়েনি। ধ্বংসস্তূপ সরানোর সময় তার কান্নার আওয়াজ শুনেই ইট-বালি সরিয়ে তাকে উদ্ধার করেন সেই ব্যক্তি।
তবে বিপদ এখনো সম্পূর্ণভাবে কাটেনি বলে জানায় মরক্কোর সশস্ত্র বাহিনী। এদিকে আবার ভূমিকম্প হতে পারে আতঙ্কে দ্বিতীয় রাতও খোলা আকাশের নিচেই কাটিয়েছেন হাজার হাজার মরক্কোবাসী। বাড়িতে ঘুমাতে ভয় পাচ্ছেন তারা। মধ্য মারাকেচের অলিভারেই পার্কে কম্বল ও অস্থায়ী গদিতে শুয়ে রাত কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার রাস্তায় রাস্তায় তঁবু টাঙিয়ই ঘুমিয়ে পড়েন।