Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ভারত মন্ডপমে ২৯ দেশের ঐতিহ্য

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০৬ পিএম

ভারত মন্ডপমে ২৯ দেশের ঐতিহ্য

জি-২০ সম্মেলন ঘিরে তোড়জোড় আয়োজন দিল্লিতে। সম্মেলনকেন্দ্র ভারত মন্ডপমে দ্বিতীয় তলায় দেখা যাবে ২৯ দেশের ঐতিহ্যের সমাহার। অতি প্রাচীন বিরল কিছু শিল্পকর্মের দেখা পাবেন আগুন্তুকরা। 

ভৌত ও ডিজিটাল দুভাবেই প্রদর্শন করা হবে নিদর্শনগুলো। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাণিনি অষ্টাধ্যায়ী; এই ভাষাতাত্বিক পাঠ্যটি যা সংস্কৃতিকে কীভাবে লিখতে এবং কথ্য ভাষায় ব্যবহার করা হয় তার মান নির্ধারণ করে। 

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্জির বিখ্যাত মোনালিসাও এ সম্মেলনে দেখানো হবে। ১৫ জুন ১২১৫ সালে উইন্ডসরে ইংল্যান্ডের রাজা জন কর্তৃক সম্মত অধিকারের একটি রাজকীয় সনদ ম্যাগনা কার্টাও প্রদর্শিত হবে। 

জার্মানিতে মুদ্রিত প্রাচীনতম বই গুটেনবার্গ বাইবেলও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মেক্সিকোর অ্যাজটেক ভাস্কর্য কোটলিকিউ মূর্তিরও দেখা মিলবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি আন্তঃধর্মীয় কমপ্লেক্স আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউজসহ এমন আরও কিছু নিদর্শন রাখা হবে। ‘সংস্কৃতি করিডোরে’ প্রদর্শিত বেশ কয়েকটি প্রত্মবস্তুর মধ্যে চীনের একটি ফাহুয়া-ঢাকনাযুক্ত জার থাকবে। 

সংস্কৃতি মন্ত্রকের মতে ২৯টি দেশ থেকে ‘সেরা এবং সবচেয়ে মূল্যবান’ নিদর্শনগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আরও একজন কর্মকর্তা বলেন, মন্ত্রক ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসাবে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি প্রদর্শনীও স্থাপন করছে, যা আমাদের ৫,০০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস এবং এই বছরগুলোতে আমরা কীভাবে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছি এবং শক্তিশালী করেছি তা তুলে ধরবে।’ ইন্ডিয়া টিভি নিউজ।

৫০০ বছরের পুরোনো ঋগ্বেদের প্রদর্শন

নয়াদিল্লিতে আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্বের অনন্য অবদান রাখবে ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই)। শারদা লিপিতে হাতে লেখা ঋগ্বেদের একটি অনুলিপি প্রদর্শিত হবে। প্রায় ৫০০ বছর আগে কাশ্মীরি বার্চের ছালের ওপর লেখা এ পাণ্ডুলিপিটি একজন জার্মান পণ্ডিত জোহান জর্জ বুহলার পুনরুদ্ধার  করেছিলেন। এই পাণ্ডুলিপিটি ঋগ্বেদের অন্যতম প্রাচীন এবং প্রকৃত কপি হিসাবে স্বীকৃত। ঋগ্বেদীয় গবেষণায়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্য ইন্ডিয়ার এক্সপ্রেস।

বৃষ্টির আশঙ্কায় চার পানি নিষ্কাশন ট্রাক

আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মোটামুটি সব ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ভারত। সম্মেলনের দিন বৃষ্টির আশঙ্কায় জলাবদ্ধতা ঠেকাতেও নেওয়া হচ্ছে জোর ব্যবস্থা। গুজরাটের আহমেদাবাদ থেকে দিল্লিতে এসে পৌঁছেছে চারটি পানি নিষ্কাশন ট্রাক। প্রগতি ময়দানের ‘আইটিপিও’ ও রাজঘাটে রাখা হবে বিশাল ট্রাকগুলো। 

অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দিল্লির ফায়ার সার্ভিস এ উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার টাইমস অব ইন্ডিয়ায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিল্লির লেফট্যানেন্ট গভর্নর এলজিভিকে সাক্সেনা বলেন, ‘গুজরাটের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বেশ উন্নত এবং চারটি পানি নিষ্কাশন ট্রাক যেকোনো জলাবদ্ধ এলাকা পরিষ্কার করতে সক্ষম। আমরা জলাবদ্ধতা ঠেকাতে প্রস্তুত। কমপক্ষে ২০০ ট্র্যাক্টর-মাউন্ট করা পাম্প প্রস্তুত এবং সেগুলো বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়ন করা হবে। বৃষ্টির কারণে কোনো জলাবদ্ধতা হলে তা অবিলম্বে পরিষ্কার করা হবে। 

নরেন্দ্র মোদির সেক্রেটারি পিকে মিশরা জানান, রাজঘাট এবং আইটিপিওতে দুটি করে পানি নিষ্কাশন ট্রাক মোতায়ন করা হয়েছে। এগুলো যেকোনো জায়গায় সরানো যেতে পারে। প্রতিটি গাড়ি ১৫ মিটার ব্যাসার্ধে প্রতি মিনিটে ১০০০ লিটার হারে দ্রুত বেগে পানি নিষ্কাশনে সক্ষম।’

৬০ জায়গায় ৭ লাখ ফুলগাছ

বাহারি রঙের ফুলে ভরে উঠেছে দিল্লির সড়কগুলো। আলপোনার ছোঁয়ায় রাঙা টবগুলো যেন আরও সৌন্দর্যবর্ধন করছে। মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রায় ৭ লাখ ফুলগাছ রোপিত হয়েছে রাজধানীতে। ফুটপাত, রাস্তা ও ফাঁকা স্থানগুলোতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। 

শহরের ৬০টির বেশি স্থানে লাগানো গাছগুলোর সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। মোতায়েন করা হচ্ছে বাড়তি পুলিশ। দিল্লির টহলকর্মীরা চোর, দুর্বৃত্ত এমনকি উদ্ভিদ কৌতূহলীদের ওপর রাখছে বাড়তি নজর। যেসব চালক ফুটপাথের পাশে তাদের যানবাহন থামিয়ে টব থেকে ফুল ছিঁড়ছে তাদের ওপরও রাখা হচ্ছে কড়া নজরদারি। 

ক্যাপিটাল ফোর্সের একজন ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (ডিসিপি) বলেছেন, ‘যদিও এটি একটি কঠিন কাজ, আমরা কর্মীদের বিষয়টিতে ওপর নিবিড় নজর রাখতে এবং চোরদের থেকে দূরে রাখতে বলেছি। তবে বেশিরভাগ পাত্রগুলো দিল্লির সিসিটিভি ক্যামেরা নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘একজন বাসিন্দা তার এসইউভিতে করে যাচ্ছিলেন এবং শহরে জি-২০ ইভেন্টের জন্য রোপণ করা গাছপালা চুরি করতে শুরু করেছিলেন। লোকটিকে অবশেষে গ্রেফতার করা হয় এবং চুরি করা পাত্র এবং তার গাড়ি জব্দ করা হয়।’

১১ হাজার ময়লার ভাগাড় সাফ

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে ঘিরে নয়াদিল্লিকে ঢেলে সাজাচ্ছে ভারত। সাফ করেছে ১১ হাজারেরও বেশি ময়লার ভাগাড়। লার্ভা প্রতিরোধী স্প্রে করা হচ্ছে ২৫০টি ওয়ার্ডে। 

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন দিল্লির মেয়র শেলি ওবেরয়।

সংবাদ সম্মেলনে ওবেরয় বলেন, শীর্ষ সম্মেলনে অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নয়াদিল্লি। হোটেল, পর্যটন আকর্ষণ ও শহরের বিমানবন্দর সংলগ্ন অঞ্চলগুলো পরিষ্কারের জন্য দল গঠন করা হয়েছে। 

রাস্তা, পার্ক, বাজার ও অন্যান্য জনপরিসর পরিষ্কারের জন্য অবিরাম কাজ করছে মিউনিসিপল করপোরেশন অব দিল্লি (এমসিডি)। আরও জানান, ১১ হাজার ২০০ থেকে ১১ হাজার ৩০০টি আবর্জনা ফেলার স্থান চিহ্নিত আর পরিষ্কার করা হয়েছে। জায়গাগুলোকে আরও সুন্দর করা হচ্ছে। শহরের রাস্তা পরিষ্কার, সুন্দর ও সংস্কারের জন্য কাজ করছে এমসিডি ও গণপূর্ত বিভাগ।

পরবর্তী সময়ে এমসিডি থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১২ হাজার আবর্জনা ফেলার জায়গা পরিষ্কার করা হয়েছে। রাস্তা পরিষ্কার করতে মোতায়েন করা হয়েছে ৫২টি যান্ত্রিক মেশিন। পরিষ্কার করা হচ্ছে পাবলিক ইউরিনাল। নয়াদিল্লি সাজানোয় বিশেষ দায়িত্বে মোট ১২ হাজার কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে সব অস্থায়ী দখল। প্রগতি ময়দানের আশপাশের তিনটি বড় ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান সড়ক ও হোটেলের কাছে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ ডাস্টবিন।

রাস্তায় রাস্তায় যখন-তখন তল্লাশি

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লি জুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারায় আছে দিল্লির রাস্তা। নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে গাড়ি থামিয়ে যখন-তখন চলছে তল্লাশি।

ট্র্যাফিক চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও যে কোনো যানবাহন তল্লাশির জন্য নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া গেটের কাছে ব্যারিকেড স্থাপন করা হয়েছে। এ কাজে সিটি পুলিশকে সহায়তা করছেন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা।

সম্মেলনের দিনগুলোতে বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইটে দিল্লির বাইরে যেতে মেট্রোরেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে ট্র্যাফিক পুলিশ। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকায় কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে যেতে চাইলে হাতে বাড়তি সময় নিয়ে রওয়ানা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিরাপত্তা তল্লাশি চালানোর সময় ট্রাফিক পুলিশদের দেখাতে হবে বিমানের টিকিট।

আকাশ নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে নয়াদিল্লিতে। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ফোর্স (এনএসজি) ও সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) দিল্লি ও গুরুগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে ড্রোন প্রতিরোধী ব্যবস্থা রেখেছে। 
যে কোনো ধরনের বিমান হামলা ঠেকাতে হোটেলের ছাদ ছাড়াও বেশ কয়েকটি কৌশলগত স্থানে স্থাপন করা হয়েছে অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম