Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

দুই দশক ধরে পারমাণবিক বর্জ্যের কবর খুঁড়ছে ফিনল্যান্ড 

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০২:৪৮ পিএম

দুই দশক ধরে পারমাণবিক বর্জ্যের কবর খুঁড়ছে ফিনল্যান্ড 

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে প্রথম দীর্ঘমেয়াদি পারমাণবিক জ্বালানি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করল ফিনল্যান্ড। দুই দশকের চেষ্টার পর পারমাণবিক বর্জ্যের কবর খুঁড়ল দেশটি। পারমাণবিক আধারটির নাম ’ওঙ্কালো স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল রিপোসিটোরি'। ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমে ইউরাজোকি পৌরসভার অধীনে পড়েছে সংরক্ষণাগারটি।

সবদিক বিবেচনায় দেশটির ওলকিলুটো পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছাকাছিই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। গভীর এ ভূ-গহ্বরটি পারমাণবিক জ্বালানির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য তৈরি হয়েছে। নামেই যেন স্থানটির পরিচয় ওঙ্কালো অর্থ ‘ছোট গুহা বা গহ্বর'। টানেলটি ৪.৫ কিলোমিটার (২.৮ মাইল) লম্বা। গভীরতা ৪৫০ মিটার (১,৪৮০ ফুট)।

আরও পড়ুন ৩ বছর পর দেশের মুখ দেখছেন উত্তর কোরিয়ার প্রবাসীরা

দুটি পারমাণবিক শক্তি উৎপাদক ‘ফোরটাম' এবং ‘টিভো' মালিকানাধীন কোম্পানি ‘পসিভা' এ বিশাল প্রকল্পটির নির্মাণ সংস্থা। ২০০৪ সালে শুরু হওয়া সাইটটি ২০২৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। সময়সাপেক্ষ এ প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৮১৮ মিলিয়ন ইউরো। তেজস্ক্রিয় বর্জ্য সংরক্ষণ চালু হলে লাখ বছর সে স্থানে কোনো মানুষ পা রাখতে পারবে না। বিবিসির সাংবাদিক এরিকা বেনেক নির্মাণ স্থানটিতে ঘুরে এসে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। 

এরিকা বেনেকের মতে, ‘স্থানটি পরিদর্শনের সময় একটি মুহূর্তে আমি বেশ ভয় অনুভব করি। আমি এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, যেখানে ২০২৫ থেকে শুরু করে এক লাখ বছরে কোনো মানুষের পা রাখা উচিত নয়। টানেলটিতে প্রবেশের সময় আমাদের নিরাপত্তার জন্য পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করা হয়। এর মধ্যে ছিল একটি উজ্জ্বল হলুদ দৃশ্যমান জ্যাকেট, জলরোধী বুট, ভিসারসহ হেলমেট, টর্চ ও বেল্ট। টানেলের অভ্যন্তরে অবস্থান নিশ্চিতকরণে হেলমেটগুলোতে ট্যাকিং ডিভাইস বসানো ছিল।

যন্ত্রটি মাটির ওপর কন্ট্রোলরুমের সঙ্গে সর্বদা আমাদের যোগাযোগ বজায় রেখেছে। এ ব্যাপারটি আমার কাছে বেশ স্বস্তির ছিল। প্রবেশদ্বারটি ছিল বেশ অন্ধকার, মেঝে অসমান ও ভেজা  এবং স্থানটি জায়গায় জায়গায় কর্দমাক্ত।'

তেজস্ক্রিয় এ বর্জ্যগুলোকে বোরন স্টিলের ক্যারিস্টারে স্থাপন করা হবে। ক্যারিস্টারটি তামার ক্যাপসুল দিয়ে আবদ্ধ থাকবে। প্রতিটি ক্যাপসুল সংরক্ষণাগারের বিভিন্ন গর্তে স্থাপন করা হবে। সবশেষে বেন্টোনাইটের কাদামাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হবে। যখন জ্বালানি সংরক্ষণটি পুরোপুরিভাবে শুরু হবে, তখন রেবোটিক যানের মাধ্যমে উল্লম্বভাবে ক্যানিস্টারগুলোকে আরও ভেতরে নিয়ে যাওয়া হবে।

দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের এ সংরক্ষণাগারটি নির্বাচন করা হয়েছিল। বাছাই প্রক্রিয়াটি ১৯৮৩ সালে পুরো ফিনিশ অঞ্চলের প্রদর্শনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। ১৯৯৩ থেকে ২০০০ পর্যন্ত মোট চারটি সম্ভাব্য সাইট পরীক্ষা করা হয়েছিল। স্থানগুলো নির্বাচনে ভূতাত্ত্বিক এবং পরিবেশগত বিবেচনার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়।

কুহমোতে রোমুভারা, অ্যানেকোস্কিতে কিভেটি, ইউরাজোকিতে ওলকিলুওটো এবং লোভিসায় হ্যাস্টলমেনে এ পরীক্ষা চলে বহুদিন। সবশেষে ইউরাজোকি ও লোভিসাকে সর্বোচ্চ স্থানীয় সমর্থনসহ বাছাই করা হয়। ১৯৯৯ সালে ‘পসিভা' নির্বাচিত স্থানটি ফিনিশ সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছিল।

২০০১ সালের মে মাসে সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় সরকার। পরে ২০০৪ সালে শুরু হয় নির্মাণযজ্ঞ। ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি বলেছেন, ওঙ্কালো পারমাণবিক শক্তির দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বের জন্য একটি ‘গেম চেঞ্জার'। ফিনল্যান্ড প্রকল্পের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া এবং এটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক কার্যকলাপের টেকসই সম্পর্কে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। উচ্চস্তরের তেজস্ক্রিয় পারমাণবিক বর্জ্যের জন্য ভূতাত্ত্বিক ভাণ্ডারের ধারণা সম্পর্কে সবাই জানত, কিন্তু ফিনল্যান্ড তা করে দেখিয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম