হোয়াইট হাউস দখলে রিপাবলিকানে দৌড়ঝাঁপ শুরু
হৃদিতা ইফরাত
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০৫:৫৯ পিএম
আগামী বছরের নভেম্বরেই হতে চলেছে বহুল প্রতীক্ষিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। হোয়াইট হাউস দখলে ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ। বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টিতে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই।
বুধবার সন্ধ্যায় ফক্স নিউজ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত প্রাথমিক বাছাইয়ের তর্কে-বিতর্কে যার যার অবস্থান শক্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন ৮ প্রার্থী। তর্ক শেষে দেখা গেল প্রতিযোগিতার লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছে বহুল জনপ্রিয় নাম। চমক দেখাচ্ছে নতুন নতুন মুখ।
তবে রিপাবলিকানের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী তালিকার শিরোমণি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বিতর্কে অংশ নেননি। খবর এপি, গার্ডিয়ান, বিবিসি, সিএনএন।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রথম পর্বে এদিন ‘স্পটলাইট’ নিজের দিকে নিয়ে নেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিবেক রামাস্বামী। অন্যদিকে নড়বড়ে হয়ে গেছে মধ্যবর্তী নির্বাচনে শোরগোল বাধিয়ে দেওয়া রন ডিসেন্টিসের অবস্থান ।
বিবেক রামাস্বামী (৩৮) যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতে একজন উদ্যোক্তা, অধিকারকর্মী ও বিনিয়োগকারী। ২০২৪ সালে মার্কিন নির্বাচনে প্রার্থিতার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। রিপাবলিকান ভোটে রয়েছেন তৃতীয় অবস্থানে। তর্কযুদ্ধেও সবার মধ্যমণি হয়ে উঠেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ট্রাম্পকে। যুক্তরাষ্ট্রের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর কথা বলেন তিনি। বির্তকে তিনি জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার এবং কয়লা পোড়ানোর বিষয়টিকে কঠোরভাবে নিন্দা জানান বিবেক রামাস্বামী। এর আগে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষস্থানে দেখতে চাই। এজন্য সবার আগে আমেরিকা কী তা বুঝতে হবে। এটাই আমার মূল লক্ষ্য। মেধাতন্ত্র থেকে বাকস্বাধীনতার পথে, অভিজাততন্ত্র থেকে স্বশাসনের পথে যাত্রায় আমি জাতিকে নেতৃত্ব দিতে চাই। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে হুমকির চোখে দেখেন বিবেক। ক্ষমতায় গেলে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নকে জোরদার করবেন তিনি।
তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পকে টলিয়ে দেওয়া রন ডিসেন্টিস বির্তকে তার অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। টালমাটাল এ অবস্থায় তার সাত প্রতিপক্ষের কেউই তাকে আক্রমণ করার প্রয়োজন অনুভব করেননি। তবে ডিসেন্টিসকে সুপার পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটির (পিএসি) পুতুল বলে তাকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেন বিবেক। তবে তার এ আক্রমণে পালটা কোনো উত্তর দেননি ডিসেন্টিস। সেদিন বির্তকে ডিসেন্টিস স্পষ্ট কিছু ভুল করেছিলেন। ডিসেন্টিসের প্রচার ব্যবস্থাপক একটি বিবৃতিতে বলেন, অন্যান্য প্রার্থী যখন একে অপরের সঙ্গে তর্কে ব্যস্ত ছিল, ডিসেন্টিস আমেরিকা জনগণের দিকে মনোনিবেশ করছিলেন। দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে, সীমান্ত সুরক্ষিত করতে, মা-বাবার ক্ষমতায়ন, আইন প্রয়োগকারীদের সমর্থন ও বামপন্থি অভিজাতদের বিরুদ্ধে তার স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করছিলেন।
বিতর্কের সেই রাতটি মোটেও অনুকূলে ছিল না টিম স্কটের জন্য। নিজের শৈশব ও সংগ্রামের কথাই বলে গেছেন তিনি। তার কোনো উত্তরই তেমন আকর্ষণীয় ছিল না। স্কটকে একজন সহজ সরল, মৃদুভাষী মধ্যপন্থি কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। বিতর্কে তিনি ছিলেন ধীর এবং নিষ্ক্রিয়। দ্বিস্তরীয় বিচার ব্যবস্থা ও গর্ভপাতের বিষয়ের ওপর বিভ্রান্তিকর বক্তব্য তাকে পেছনে ফেলে দেয়। ফক্সকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমাকে এটাই নিশ্চিত করতে হবে আমেরিকান জনগণ জানুক আমিই প্রার্থী, যার যুক্তির ক্ষমতা আছে। ক্ষমতায় আসলে নতুন আশা, নতুন সুযোগ তৈরি ও যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য কাজ করব।
এ সময় তিনি চীনের প্রসঙ্গ টেনে বাইডেনের দুর্বলতার কথাও বলেন। আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাদের অর্থনীতিকে পৃথক করার চেষ্টা করব, যাতে আমরা মাইক্রো চিপ, ওষুধ এবং খনিজ সম্পদগুলোর ক্ষেত্রে আরও স্বাধীন হতে পারি।
বিতর্কে বেশ চমৎকার বক্তব্য রেখেছেন দক্ষিণ ক্যারোলিনার সাবেক গর্ভনর নিকি হ্যালি। তিনি মনোযোগী, স্পষ্টবাদী এবং খুব যথাযথ উত্তর দিয়েছেন। মাইক পেন্সের ওপর পালটা আক্রমণে তিনি বলেন, তিনি ফেডারেল স্তরে আইনে ১৫ সপ্তাহের গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করবেন। তবে জাতীয় ব্যবস্থা পাশ করার জন্য সিনেটে পর্যাপ্ত ভোট নেই।
মাইক পেন্সও বিতর্কে বেশ সাবলীল ছিলেন। প্রথাগত রক্ষণশীলদের সঙ্গে সৌজন্যমূলকভাবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে স্পষ্টভাবে নিজের মতামত দেন। ফেডারেল নিষেধাজ্ঞার জন্য তার সমর্থনে গর্ভপাত বিরোধী দলগুলোর কাছে আবেদন করেছিলেন।