Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

৩৮ বছর ধরে ছেলেকে তৈরি করেছেন হুন সেন

Icon

শাবনুর নাহার

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪২ পিএম

৩৮ বছর ধরে ছেলেকে তৈরি করেছেন হুন সেন

কৌশলী বাবার হাতেই দক্ষ হয়ে গড়ে উঠেছেন হুন মানেট (৪৫)। প্রায় চার দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা কম্বোডিয়ার শক্তিধর প্রধানমন্ত্রী হুন সেন পদত্যাগের আগেই ছেলের হাতে তুলে দেন দেশ। প্র

ধানমন্ত্রী পদের জন্য উপযুক্ত করে তুলতে ৩৮ বছর ধরেই ছেলেকে তৈরি করেছেন হুন সেন। তবে জনশ্রুতি আছে, বাবার মতো নিষ্ঠুর নন ছেলে। ধীর-স্থির-শান্ত প্রকৃতির মানুষ।

প্রতিদিন একটু একটু করে নিজের মতো করে ছেলেকে গড়ে তুলেন হুন সেন। ছেলেকে ‘রাষ্ট্রপ্রধান’ বানানোর চেষ্টাটা সেই প্রথমদিন থেকেই।

‘মানেটের জন্মের সময় শতাব্দী প্রাচীন এক বটগাছ থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। পাঁচশ মানুষ সেই আলো দেখেছিল।’ ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে নিজের বায়োগ্রাফি ‘স্ট্রং ম্যান : দ্য এক্সট্রা অর্ডিনারি লাইফ অব হুন সেন’র লেখককে নিজেই একথা বলেছিলেন হুন সেন। 
সমালোচকরা বলেন, মানেটকে নিয়ে তার ভবিষ্যতের স্বপ্নের বীজটি সেদিনই বপন করেন তিনি। জন্মলগ্নেই জনগণকে মোহাবিষ্ট করে ফেলেন ছেলের পৌরাণিক ক্ষমতায়।

সেদিন থেকেই মানেটকে তার বাবার মতো একইভাবে দেশ শাসনের জন্য নির্ধারিত হিসাবে গণনা করা হতো। তবে রাজনৈতিক পথে মানেট উপযুক্ত কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন বাবা। কিন্তু থাইল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত যুদ্ধ ঘুচিয়ে দেয় সব দ্বিধা। 

২০০৮ সালের জুনে প্রিয়াহ বিহার মন্দির কমপ্লেক্স নিয়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে দীর্ঘদিনের চলমান সীমান্ত বিরোধ সরাসরি যুদ্ধে রূপ নেয়। সেই সময় হুন সেন তার ছেলের ওয়েস্ট পয়েন্ট শিক্ষাকে পরীক্ষা করার সুযোগ পান। তাকে মন্দিরের চারপাশে কম্বোডিয়ান বাহিনীর দায়িত্বে রাখেন। মানেটও সঠিকভাবে প্রমাণ করেন নিজেকে। 

সেসময়ই মার্কিন নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল রবার্ট উইলার্ড একটি মার্কিন কংগ্রেসনাল কমিটিকে বলেন, ‘মানেটকে প্রিয়াহ বিহারে পাঠানোর মাধ্যমে হুন তাকে তার উত্তরাধিকার হিসাবে তৈরি করছেন বলে মনে হয়।’ 

আরও বলেন, এই দ্বন্দ্ব একজন সামরিক নেতা হিসাবে মানেটের পরিচয় তৈরি করেছে, যিনি বিদেশি হুমকির বিরুদ্ধে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেন।’ ধীরে ধীরে এটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে মানেটই প্রকৃতপক্ষে শীর্ষ পদের জন্য উপযুক্ত।

১৯৯৫ সালে ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন মানেট। সেখানে কেভিন জেমস নামের একজন তার সঙ্গে রুম ভাগাভাগি করে ছিলেন। 

স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মানেটের সঙ্গে বসবাস নিয়ে আমার কখনো কোনো অভিযোগ ছিল না। তিনি অনেক বন্ধত্বপূর্ণ, সদয় ও বিবেকবান ব্যক্তি। তিনি কখনো কোনো সমস্যার সৃষ্টি করতেন না।’ 

অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর মানেট নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে জান। কীভাবে বিশ্বকে দরিদ্রতার সবচেয়ে খারাপ অবস্থা থেকে বের করে আনা যায় তা শিখতে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিশ্বব্যাংকে ইন্টার্নশিপও করেছেন। পরে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য যুক্তরাজ্যে চলে যান। তার পিএইচডি সুপারভাইজার জোনাথন টেম্পল গত বছর স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, মানেট সর্বদা বিনয়ী, শ্রদ্ধাশীল ও কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন।

পরিবারের প্রতিও হুন মানেটের ছিল অগাধ টান। চার ভাই-বোন। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভাই-বোনদের জন্য নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড শহরে চার বেডের একটি বাসা নেন। ২০০৬ সালে পিচ চ্যানমনিকে বিয়ে করেন। তিন সন্তানের বাবা হন মানেট। 

বিয়ে, ব্যবসা, পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন-সব কিছুই মানিয়ে গুছিয়ে চলতেন সঠিকভাবে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর ২২ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেন মানেট। তিনি একজন প্রশিক্ষিত অর্থনীতিবিদ ও অভিজ্ঞ জেনারেল। 

অনেক কম্বোডিয়ান ভাবছেন রাজনীতিবিদ হিসাবে তিনি কেমন হবেন। দেখার অপেক্ষায় আছেন, তার বাবার স্বৈরাচারী মনোভাব তার মধ্যেও আছে কি না। 

তবে এ সম্পর্কিত এক মন্তব্যে হুন সেনের দীর্ঘদিনের শত্রু  নির্বাসিত রাজনীতিবিদ স্যাম রেনসি গত মাসেই এএফপির এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন , পশ্চিমা শিক্ষা আরও উদারপন্থার কোনো গ্যারান্টি নয়।  ‘

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের ( প্রায় ৩ দশকের শাসক) চেয়ে বেশি শিক্ষিত।  কিন্তু ছেলে রাজনৈতিকভাবে বাবার চেয়ে খারাপ।


 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম