Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে ঢুকতে ঘাম ছুটছে ছাত্রদের

Icon

হৃদিতা ইফরাত

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫৩ পিএম

চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে ঢুকতে ঘাম ছুটছে ছাত্রদের

চীনে সমাজতান্ত্রিক দল প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের চায়নিজ কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিসিপি) দলে দলে যোগ দিচ্ছে ছাত্ররা। চীনে স্থায়ীভাবে বসবাস করে সরকারি চাকরি লাভ ও বাড়তি সুযোগের আশায় ছাত্রদের মধ্যে এ আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।

সিসিপির ‘কাস্তে-হাতুড়ি’র নেশায় যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে গোটা তরুণ প্রজন্ম। দূরদর্শী স্বপ্ন পূরণে দরজায় শক্ত তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল চীনের বাম সরকারের এই শতবর্ষী দুর্গও। রীতিমতো ঘাম ছুটছে দুর্গের ফটক পার হতে। যত দিন গড়াচ্ছে ততই যেন আর কড়া হচ্ছে দলটির সদস্য বাছাই প্রক্রিয়া। 

এ সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য, দেশের শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের হাতেই দেশটির রাজনৈতিক ভার তুলে দিতে চান শি। এ কারণেই পার্টির সদস্য বাছাইয়ে সংখ্যার চেয়ে গুণগতমানের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। অপরিণতদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।’ এর প্রভাবও পড়ছে দলে।  রাজনীতিতে আগ্রহী ৩০ বছরের কম বয়সিদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

সরকারি একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে প্রায় ২১ মিলিয়ন মানুষ আবেদন জমা দিয়েছিল। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ বেশি। এমনই একজন পূর্ব জিয়াংসু প্রদেশের ২০ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উ।  ক্ষমতাসীন সমাজতান্ত্রিক দলটিতে যোগদানের জন্য ১ জুলাই তিনি আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে আমার পরীক্ষা হিসাবে নিয়েছি... পার্টিতে যোগদানের জন্য অতিরিক্ত কয়েক মাইল হেঁটে যেতেও প্রস্তুত’।

আরও বলেন, ‘আমি কয়েকজন বন্ধুকে চিনি যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও পার্টিতে যোগদানের জন্য তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কারণ ভিসার জন্য আবেদন করার সময় তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে তারা পার্টির সদস্য কিনা।’

কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। যারা চীনে অবস্থান করছেন তাদের জন্য পার্টির সদস্যপদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, চীনে বেশিরভাগ সরকারি চাকরিরই পূর্বশর্ত ‘তুমি কি সিসিপি’র সদস্য?’।  দেশটিতে ১৬-২৪ বছর বয়সিদের জন্য বেকারত্বের হার জুন মাসে ২১.৩ শতাংশের নতুন উচ্চে পৌঁছেছে। তাই দ্রুত পার্টিতে যোগ দিয়ে অনেকেই সরকারি সুবিধাগুলো ভোগের অপেক্ষা করছে। 

তবে পার্টিতে যোগ দেওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। আবেদনের পর দলীয় বিষয়ের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবেদন যাচাই-বাছাই করেন। এটি প্রাথমিক ধাপ। এরপর বহু চড়াই-উতরাই পার করে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। বছরখানেক জোরালো নজরদারির পর দলের আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থাকলেই কেবল তাকে বাছাই করা হয়। চীনা একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি আরও কড়াকড়ি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিজ শহরে পুলিশ এবং কমিউনিটি ম্যানেজারদের সঙ্গে তাদের অতীতের আচরণ সম্পর্কে খোঁজ করা হয়। শুধু ব্যাক্তিগত নয়, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অপরাধমূলক রেকর্ডও যাচাই-বাছাই করা হয়। সংস্থাটির নীতি হলো-রাজনৈতিক পর্যালোচনা অবশ্যই গুরুতর হতে হবে, তথ্য থেকে সত্য সন্ধান করতে হবে এবং একজনের ধারাবাহিক কর্মক্ষমতার ওপর নজর রাখতে হবে।  যারা রাজনৈতিক পর্যালোচনায় উত্তীর্ণ হননি তারা দলে যোগ দিতে পারবেন না। 

দলটির কেন্দ্রীয় সংগঠন বিভাগ জানিয়েছে, পার্টিতে ৩০ বছরের কম বয়সি মোট সদস্যের সংখ্যা গত বছর ১২.৪৩ মিলিয়নে নেমে এসেছে, যা ১ জুলাই ২০২১ থেকে ১৮৯,০০০ বা ১.৫ শতাংশ কম। এ সংখ্যাটির অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। 

সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের একজন সিনিয়র গবেষক প্রফেসর জি মাওসোং বলেন, ‘তরুণদের কঠোরভাবে যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পার্টির সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তরুণ প্রজন্মের ওপর আশা পোষণ করেছেন কারণ তারা নতুন যুগে শিক্ষিত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা যেহেতু চীনের উত্থানকে ভেঙে ফেলার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আমরা এখানে অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ দেখতে থাকব। পার্টির তাজা রক্তের প্রয়োজন যারা দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারে, অনুগত থাকতে পারে এবং চাপের মধ্যেও ভালো পারফর্ম করতে পারে’, এমনকি প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকেও ১৯৭৪ সালে পার্টির সদস্য হওয়ার আগে  নয়বার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

সেন্ট্রাল পার্টি স্কুলের অফিসিয়াল সংবাদপত্র স্টাডি টাইমসের সাবেক উপ-সম্পাদক ডেং ইউয়েন বলেছেন, ‘বিশ্বে সম্ভবত চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতেই যোগদান করাই সবচেয়ে কঠিন। শি চিন্তিত যে আদর্শ এবং প্রত্যয়ে পশ্চিম দ্বারা প্ররোচিত একটি রঙিন বিপ্লবের মুখোমুখি হলে তার পার্টি দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় শাখাগুলোকে শক্ত করা ও শক্তিশালী করা প্রতিরক্ষার প্রথম ধাপ হয়ে উঠেছে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম