এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাসক কম্বোডিয়ার হুন সেন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ জুলাই ২০২৩, ১১:১১ পিএম
টানা ৩৮ বছর দেশ শাসন করছেন কম্বোডিয়ার বর্তমান শাসক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন (৭০)। এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এই ‘গণতান্ত্রিক’ শাসক ১৯৮৫ সাল থেকে তার ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর একর পর এক কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োগ করে গেছেন। এমনকি দেশের আদালতকেও ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে। সামরিক বাহিনী, পুলিশসহ গোয়েন্দা গোষ্ঠীকে রেখেছেন হাতের মুঠোয়। সংসদ-সদস্যদের তাদের পদমর্যাদা থেকে সরিয়ে দেওয়াসহ নেতাদের বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গ্রেফতার করেছেন, নির্বাসনে পাঠিয়েছেন।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে কম্বোডিয়া সংসদে ১২৫ আসন জিতে জয়লাভ করেছিলেন। রোববার আবারও কম্বোডিয়ায় ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে দেশের জনগণের রয়েছে অনাস্থা। দেশের সবারই প্রায় নিশ্চিত, এদিনের ভোটে আবারও জয়ী হতে যাচ্ছে হুন সেনের কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)।
নমপেনের একজন সাহায্যকর্মী বিবিসিকে বলেন, ‘এই নির্বার্চন (২৩ জুলাই) হবে কারচুপির নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে কোনো শক্তিশালী বিরোধী দল নেই।’ এক ভোটার বলেন, ‘জনগণের স্বার্থ আর সমস্যা নিয়ে কথা বলার মতো সংসদে কোনো প্রতিনিধি থাকবেন না।’
১৯৯০-এর দশকে খেমার রুজ শাসনের ভয়াবহতার পর জাতিসংঘ কম্বোডিয়াকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখনো একটি কর্তৃত্ববাদী একদলীয় রাষ্ট্র। বেশিরভাগ মানদণ্ড থেকে হুন সেন একজন স্বৈরশাসক।
জাল ভোট : সামনের নির্বাচনের কিছু পরই তিনি তার ছেলের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন হুন সেন। কবে ঠিক কখন তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন তা অনিশ্চিত। এ বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কিছু জানাননি। তার সাবেক বিরোধী দলগুলোর মধ্যে থেকে গত বছর ক্যান্ডেললাইট পার্টির উদ্ভব হয়। ভীতি প্রদর্শন ও কারচুপি হওয়া সত্ত্বেও দলটি গত বছর স্থানীয় নির্বাচনে ২২ শতাংশ ভোট জিতেছিল। এই দলের নেতাদেরও ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্নভাবে মামলার হুমকি দেওয়া হয়। এমনকি মে মাসে দলটিকে নিষিদ্ধ করে হুন সেন সরকার। সামনের এই নির্বাচনে ব্যালটে আরও ১৭টি দল রয়েছে।
গণতান্ত্রিক পতনের এক দশক : কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ সত্ত্বে কম্বোডিয়ার নির্বাচনে সহিংসতা আর অনিয়ম অব্যাহত ছিল। ২০১৭ সালের শেষের দিকে কম্বোডিয়ান ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টি (সিএনআরপি) নামে পরিচিত একটি জোটে শঙ্কা প্রকাশ করেন হুন সেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তারা ভোট পেয়েছিল ৪৪ শতাংশ।
স্যাম রেনসি ও কেম সোখার নেতৃত্বে ২০১৩ সালে জাতীয় ভোটের ৪৪ শতাংশ অর্জন করেছিল তারা। আর তখন এই দলের নেতারা হুন সেনের বিজয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিক্ষোভ ডাকেন। কিন্তু ২০১৭ সালের স্থানীয় নির্বাচনে সিএনআরপি আবারও চ্যালেঞ্জ করলে হুন সেন আর থেমে থাকেননি।
তিনি তার দল সিপিপি-নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্ট ব্যবহার করে ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে যেকোনো দল ভেঙে দেওয়া যাবে’-এই মর্মে আইন পাশ করেন। নতুন এই আইন ব্যবহার করে সিএনআরপি দল ভেঙে দিতে সুপ্রিমকোর্টকে ব্যবহার করেছিলেন।
প্রাথমিকভাবে ক্যান্ডেললাইট দলকে মে মাসে অযোগ্য ঘোষণা করার পরে কী করবেন তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। দলের কয়েকজন নেতা সমর্থকদের রাজপথে নামার আহ্বান জানান। নির্বাসিত থেকেও স্যাম রেনসি নির্বাচন বয়কটের আহ্বানও জানান।