বেঁচে ফেরা যাত্রীর বর্ণনা, চিরকাল এ আতঙ্ক বয়ে বেড়াব
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৩, ১০:৪৯ পিএম
কিছু একটা ঘটেছে। সেটা বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু এতবড় বিপত্তি! ট্রেন থেকে নেমেও প্রথমে তা ঠাওর করতে পারেননি ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট করমণ্ডল এক্সপ্রেসের প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। ট্রেন থামলে নিচে নামতেই প্রথমে চারদিকে নিকষ-কালো অন্ধকারে কিছুই ধরা পড়ছিল না। কিন্তু, মোবাইলের আলো জ্বালাতেই সে এক বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা।
কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে থাকা যাত্রীরা দেখেন দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে একটির ইঞ্জিন অন্যটির মাথায়। কামরাগুলো ছিটকে পড়েছে চারধারে। শুধুই ধ্বংস্তূপ। রেল ট্র্যাকে রক্তের বন্যা। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন অনেকে। কারও হাত বেরিয়ে রয়েছে, কারও দেহ থেঁতলে গেছে। অসহনীয় দৃশ্য। দুর্ঘটনার সময় ও তার পরের ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে শিউরে উঠছিলেন বরাত জোরে কোনোক্রমে বেঁচে যাওয়া বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের বেশ কয়েকজন যাত্রী। সবারই মুখে এক কথা-যা দেখেছেন তা চিরজীবন আতঙ্কের মতো তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। আনন্দ বাজার পত্রিকা।
অন্ধ্রপ্রদেশের চিক্কামাগালুরু জেলার কালাসার বাসিন্দা জৈন (৪১) শুক্রবার রাতে ভয়াবহ সেই সময়গুলোর ব্যাখ্যা করছিলেন। জৈন হাওড়াগামী বেঙ্গালুরু সুপারফাস্টের সেসব ভাগ্যবান যাত্রীদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলছিলেন, ‘তখন রাত সাড়ে প্রায় ৮টা। ট্রেনটা হঠাৎ থেমে গেল এবং একটা বিকট আওয়াজ হলো। আমাদের কামরার পেছনের বগিগুলো, এসি এবং জেনারেল যা বিপরীত ট্র্যাকের করমণ্ডল এক্সপ্রেসকে ধাক্কা। এতে আমাদেরসহ বেশ কয়েকটি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’
জৈন বলছিলেন যে, ‘প্রাথমিকভাবে, ট্রেনটি থামার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কোচের যাত্রীরা বুঝতে পারেনি যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু লোকেরা যখন ট্রেন থেকে নামছে আমরা লক্ষ্য করি যে পেছনের কয়েকটি কামরা নেই। আর দুর্ঘটনার নানা ছাপ। অন্ধকার হওয়ায় আমরা মোবাইল ফোনের টর্চ ব্যবহার করে ট্র্যাকে হাঁটা শুরু করলাম। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে গিয়ে দেখি ট্র্যাক রক্তে ভরা, মৃতদেহ ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে। আমি সেই দৃশ্য কখনোই ভুলতে পারব না।’
‘পাশের গ্রামের বেশ কিছু লোক ট্রেনের ভেতরে ঢুকে লোকজনকে ততক্ষণে উদ্ধার শুরু করেছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কামরায় পৌঁছতে মই নিয়ে এসেছিলেন ওরা। গ্রামবাসী একে একে লাশগুলো বের করে ট্র্যাকের পাশে রাখছিলেন। এটা সত্যিই বেদনাদায়ক ছিল এবং আমি যা দেখছিলাম তা সহ্য করতে পারছিলাম না,’ বলেন জৈন। তার দাবি, এর কিছুক্ষণ পরে পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ওই ট্রেনেরই আরেক যাত্রী নাগাস্বামী শেট্টি (৭৬) চিক্কামাগালুরুর কালাসারই বাসিন্দা। তারও গন্তব্য ছিল ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত জৈন সম্প্রদায়ের জন্য পবিত্র স্থান সামেদ শিখরজি। শেট্টির কথায়, ‘আমি ট্রেনের এস৫ কোচে ছিলাম। আমরা প্রার্থনা করছিলাম এবং তখনই একটা ঝাঁকুনি হলো। তাতেই আমরা সবাই আমাদের চেয়ার থেকে পড়ে যাই। আমাদের বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ট্রেনটি থামার আগে ততক্ষণে আরও এক কিলোমিটার এগিয়ে গেছে। পরে, আমরা জানতে পারি যে, কয়েকটি কোচ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
শেট্টি এবং কালাসার অন্যান্য তীর্থযাত্রীরা ৩১ মে শহর ছেড়েছিলেন এবং ১ জুন বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। তার কথায়, ‘আমাদের ট্রেনটির রাত সাড়ে ১০টায় ছাড়বার কথা থাকলেও তা দুই ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছিল। দুর্ঘটনার পর একটি ডিজেল ইঞ্জিন এসে বাকি কোচগুলোকে অন্য প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যায়। এখন, আমরা কলকাতায় যাচ্ছি এবং আমরা ভাগ্যবান যে বেঁচে আছি।’