পাকিস্তানের বৃহত্তর স্বার্থ অথবা দেশকে ধ্বংস থেকে বাঁচাতে সেনাবাহিনী ও সরকারের ‘মাইনাস-ইমরান’ ফর্মুলাতেও রাজি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
শনিবার দলের ওপর ক্র্যাকডাউন আর সাম্প্রতিক দাঙ্গা অব্যাহত থাকায় সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা জানান।
ইমরান খান বলেন, ‘তবে আমাকে বলুন এটি কীভাবে দেশের উপকার করবে।’ এছাড়া ভাষণে ৯ মে তাকে গ্রেফতারের পর দেশব্যাপী দাঙ্গা আর সমর্থকদের লাহোর কর্পস কমান্ডার হাউজ ও জেনারেল হেডকোয়ার্টারসের (জিএইচকিউ) প্রবেশদ্বারসহ সামরিক স্থাপনায় পিটিআইয়ের আক্রমণ ‘একটি সুচিন্তিত ষড়যন্ত্রের অধীনে সংঘটিত হয়েছিল’ বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘কে সেই ব্যক্তি যিনি লাহোর কর্পস কমান্ডার হাউজ ভাঙচুরে জনগণকে উস্কানি ও পরে নিখোঁজ হয়ে যান?’ ইমরান খানের দাবি, ক্ষমতাসীন জোট নির্বাচনে জিততে পারবে না জেনেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।
দেশব্যাপী সহিংসতার কথা বলতে গিয়ে ইমরান খানের প্রশ্ন, পিটিআইয়ের প্রতিবাদ যখন ভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছিল তখন কেন পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তান অফিসটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এর আগে বলেছিলেন, অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তা উল্লেখ করে ইমরান খান জানতে চান ‘অক্টোবরে নির্বাচন করে লাভ কী? আমাদের কি এর মধ্যে অর্থনীতি উন্নত হয়ে যাবে? নাকি অক্টোবরে মুদ্রাস্ফীতি অদৃশ্য হয়ে যাবে? ইমরান অভিযোগ করেন, পিটিআই ধ্বংসের পরই ক্ষমতাসীন দল সাধারণ নির্বাচন করতে চায়।
সরকারের সমালোচনা করে ইমরান খান আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস করতে গোটা দেশকে ধ্বংস করছে বর্তমান সরকার।
সেনা আইনে বিচার শুরু: সংবিধান থেকে প্রাপ্ত বিদ্যমান ও প্রতিষ্ঠিত আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী, পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট ও অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে ৯ মে হামলায় জড়িত পরিকল্পনাকারী, উস্কানিদাতা, প্ররোচনাকারী ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচারের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)-এর একটি প্রেস রিলিজে জানা যায়, ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত লাহোরের জিন্নাহ হাউজ ও একটি সেনা স্থাপনা পরিদর্শনের সময় সেনাপ্রধান (সিওএএস) জেনারেল অসীম মুনির এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, যে শত্রু ও তাদের মদদদাতারা ভুয়া ও অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। জাতির সহায়তায় শত্রুদের এসব পরিকল্পনাকে পরাজিত করা হবে ইনশাআল্লাহ। কর্পস সদর দপ্তরে গ্যারিসন অফিসার এবং সৈন্যদের উদ্দেশে জেনারেল মুনির বলেন, জনগণ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে দূরত্ব তৈরির লক্ষ্যে যে কোনো পদক্ষেপ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ। ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরির যে কোনো প্রচেষ্টা যে কোনো অবস্থাতেই সহনীয় অথবা ক্ষমাযোগ্য নয়।’
এরপর সেনাপ্রধান লাহোরের সার্ভিসেস হাসপাতাল পরিদর্শন করে পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) আলী নাসির রিজভির সুস্থতার বিষয়ে খোঁজ নেন। রিজভি ৯ মের সহিংসতায় ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের’ দ্বারা আহত হয়েছিলেন।
এরপর তিনি পুলিশ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ৯ মে ‘দাঙ্গার’ সময় তাদের পেশাদারিত্ব এবং সংযম অনুশীলনের প্রশংসা করেছেন। তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান আর প্রশিক্ষণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগগুলোকে সেনাবাহিনীর পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অসীম মুনির বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার এ ঘোষণা দিলেও রোববার শিয়ালকোটে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর একটি সমাবেশে ফেডারেল প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, মৌলিক অধিকার হরণ অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো আইনের ব্যবহার করা হবে না। ‘ভিডিওতে সামরিক স্থাপনায় হামলার সময় যে দুষ্কৃতকারীদের দেখা গেছে তাদের বিচার করা হবে।’
সামরিক আদালতে বিচারের পক্ষে মরিয়ম নওয়াজ
পিএমএল-এন’র সিনিয়র সহসভাপতি মরিয়ম নওয়াজ ৯ মে সহিংসতার সন্দেহভাজনদের সামরিক আদালতে বিচারে সমর্থন দিয়েছেন। শনিবার লাহোরের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ সমর্থন দেন। বক্তৃতায় তিনি দাবি করেন, বেসামরিক বিচার বিভাগ ইতোমধ্যেই পিটিআই-এর একটি ‘হাতিয়ার’ হিসাবে কাজ করছে। বেসামরিক আদালতের বিতর্কিত আর রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হয়ে ওঠার কথা জানান তিনি।
মরিয়ম বলেন, সারা বিশ্বের মধ্যে রিমান্ডে থাকাকালীন কাউকে জামিন দেওয়া হয়নি। কিন্তু পিটিআই প্রধানকে রিমান্ডে থাকাকালীন সুপ্রিমকোর্ট জামিন দিয়েছেন। আরও বলেন, ৯ মে পিটিআই এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যা কোনো রাজনৈতিক দল আগে কখনো নেয়নি।
কোনো সামরিক আদালত স্থাপন করা হচ্ছে না: খাজা আসিফ
সেনাবাহিনীর শীর্ষস্থানীয়রা সামরিক স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্ট এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টসহ প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে বিক্ষোভকারী ও তাদের মদদদাতাদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
শনিবার সেনাপ্রধান (সিওএএস) জেনারেল অসীম মুনির জানিয়েছেন, সংবিধান থেকে প্রাপ্ত বিদ্যমান ও প্রতিষ্ঠিত আইনি প্রক্রিয়া অনুসারে পাকিস্তান সেনা আইন এবং অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের অধীনে বিচারের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু রোববার শিয়ালকোটে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশে বের করা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)-এর একটি সমাবেশে দেওয়া ভাষণে ফেডারেল প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, মৌলিক অধিকার হরণ অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো আইনের ব্যবহার করা হবে না। ‘ভিডিওতে সামরিক স্থাপনায় হামলার সময় যে দুষ্কৃতকারীদের দেখা গেছে তাদের বিচার করা হবে।’