মিসরের পথে সুদানিদের দুঃসাহসিক মরুযাত্রা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫২ পিএম
সুদানে টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলছে দুই জেনারেলের ক্ষমতা দখলের লড়াই। রাষ্ট্র শাসনে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে সাধারণ জনগণের কথা ভাবার সময় নেই কারও। তাই প্রাণ বাঁচাতে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে প্রতিবেশী দেশ মিসরে পৌঁছেছে অসহায় মানুষগুলো। দুঃসাহসিক এই মরু যাত্রায় এক হাজার কিলোমিটার (৬০০ মাইল) সড়কপথ অতিক্রম করেছে অনেক পরিবার।
নিদ্রাহীন রাত আর মিনিটে মিনিটে মৃত্যুভয়ের মধ্যে নারী-শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে ছোট ছোট বাসে গর্তে ভরা এবড়োথেবড়ো রাস্তা ধরে কিভাবে এ বিপদ অতিক্রম করলেন সুদানিরা সেই বর্ণনাই ওঠে এসেছে এএফপির প্রতিবেদনে।
বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি বলেন, সবচেয়ে বিপজ্জনক অংশ ছিল খার্তুম থেকে বাসে ওঠা। কারণ তখনো শহরটিতে আর্টিলারি এবং বিমান হামলাসহ সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে লড়াই চলছিল। আমরা খার্তুমের প্রান্তে বাস স্টেশনে যাওয়ার জন্য ২৫টি চেকপয়েন্ট অতিক্রম করেছি।
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক ব্যক্তি জানান, বেশির ভাগ মানুষ সামান্য কিছু জিনিসপত্র নিয়েই চলে গেছে। খাদ্য, জল বা নগদ অর্থ তো দূর লড়াই শুরুর পর জ্বালানির সংকটের মধ্যে বাসের টিকিট পাওয়াই যেন আরেক লড়াই। এরপরে বাস না ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা আমার কাছে আরও যন্ত্রণাদায়ক ছিল। কারণ লুটেরারা সারা শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাসে একটি আসনের মূল্য জনপ্রতি ১১৫ ডলার থেকে তিনগুণ বেড়ে ৪০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে গেছে। যা একজন সরকারি কর্মচারীর মাসিক বেতনের সমতুল্য। এর কারণ হলো যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জ্বালানির দাম আট গুণ বৃদ্ধি পাওয়া।
কায়রোতে সুদানের মেডিকেল ছাত্রী নুন আবদেলবাসিত (২১) বলেন, আমি খার্তুম থেকে যাত্রা করার পর দুদিন এবং দুই রাতে এখানে পৌঁছেছি। চার বছর বয়সি শিশুসহ ১০ জন আত্মীয়ের সঙ্গে মোট ২,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিতে হয়েছে আমাকে। এমনকি খার্তুম থেকে বের হওয়ার সময় আমাদের বাসটিকে দুবার সেনাবাহিনী এবং আরএসএফরা থামিয়ে দিয়েছিল। আমরা ভয় পেয়েছিলাম যে তারা বাসেও হামলা চালায় কিনা। তবে শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি।
মিসরে থাকা আরও এক সুদানি জানান, আমরা রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের মুঠোফেনে নিরাপদে আসার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। ২২ বছর বয়সি ছাত্র মুসাব আল-হাদি জানান, আমি খার্তুম থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করার পর মিসরে থাকা একজন সাহায্য করছে। তারা আমাদেরকে ফোন করে মিসরে নিরাপদ পথ খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছে। এ ছাড়াও আমাদের কাছে ভ্রমণের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও পানি আছে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করেছে।
এ ছাড়া মিসর ও সুদানের সীমান্ত আমলাতন্ত্রও একটি সমস্যা ছিল। কারণ সাধারণ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র সুদানি নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সি পুরুষদের মিসরে ভিসামুক্ত প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। অন্যদের ভিসা পাওয়ার জন্য আরেকটি সীমান্ত ক্রসিং ওয়াদি হালফাতে মিসরীয় কনস্যুলেটে যেতে হয়। তবে সুদানে লড়াই শরুর পর অতিরিক্ত কাগজপত্র ছাড়াই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।