সুদানে সামরিক বাহিনীর দুটি গ্রুপের মধ্যে পঞ্চম দিনের মতো লড়াই চলছে। রাজধানী খার্তুমের একেবারে কেন্দ্রস্থলে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও গর্জন করে যুদ্ধবিমান ওড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রাণ ভয়ে বিপুলসংখ্যক বাসিন্দা খার্তুম থেকে পালাচ্ছে। নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে তারা চলে যাচ্ছে। খবর বিবিসির।
সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর ও বিমানবন্দরের আশপাশে লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে লোকজন আশপাশের আবাসিক এলাকাগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। বেসামরিক লোকজন বাড়িঘরে আটকা পড়েছে। যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় তাদের সংগ্রহে থাকা খাদ্য ও খাবার পানিও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। নতুন করে একের পর এক বিস্ফোরণের পর বাসিন্দারা শহর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিমানবন্দরের আশপাশের রাস্তায় বহু লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।
ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে সুদানের সামরিক বাহিনীর দুই শীর্ষ জেনারেলের গ্রুপের মধ্যে লড়াই চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বিবদমান দুটো পক্ষের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা অস্ত্রবিরতির যে সমঝোতা হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
কেনিয়া, জিবুতি ও দক্ষিণ সুদানের নেতারা যুদ্ধ থামানোর লক্ষ্যে দুই জেনারেলের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা তাদের পরিকল্পিত সুদান সফর বাতিল করেছেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জেনারেলদের একটি কাউন্সিল দেশটি পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু আগামীতে দেশটি কীভাবে পরিচালিত হবে এবং বেসামরিক শাসনে ফিরে যাবে কি না তা নিয়ে কাউন্সিলের দুই শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তারা হলেন-সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং দেশটির উপনেতা ও আরএসএফ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। এছাড়া প্রায় এক লাখ সদস্যের র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং বাহিনীর নেতৃত্বে কে থাকবেন তা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন স্থানে আরএসএফ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি সুদানি সেনাবাহিনী। তারা এটিকে তাদের জন্য হুমকি হিসাবে মনে করে। এর জের ধরেই শনিবার সকাল থেকে লড়াই শুরু হয়। তবে কোন পক্ষ প্রথম আক্রমণ করেছে তা স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধের কারণে ৩৯টি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সুদানের চিকিৎসকদের এক সমিতি বলছে-খার্তুম ও আশপাশের রাজ্যে ৫৯টি হাসপাতালের মধ্যে ৩৯টিতে বোমা পড়েছে অথবা সেখান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সেন্ট্রাল কমিটি অব সুদানিজ ডক্টরস বলছে, ২০টি হাসপাতালে পুরোপুরি অথবা আংশিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ এবং বিদেশি দূতাবাসগুলো কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেলান্ড বলেন, সুদানে বড় ধরনের মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। যুদ্ধের কারণে লোকজনকে সাহায্য করাও ‘অসম্ভব’ হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, লড়াই শুরু হওয়ার আগে দেড় কোটিরও বেশি মানুষের মানবিক ত্রাণ সাহায্যের প্রয়োজন হতো; কিন্তু সংঘাত শুরু হওয়ার পর সব ধরনের ত্রাণ তৎপরতা দৃশ্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তাদের অন্তত চারজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন এবং তাদের অনেক গুদাম লুট হয়ে গেছে। ত্রাণকর্মীদের অনেকেই প্রাণ ভয়ে লুকিয়ে আছেন।