চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ইরানজুড়ে শুরু হয় হিজাববিরোধী বিক্ষোভ। বিধিনিষেধ অবসানের দাবিতে কয়েক মাসের বিক্ষোভ শেষে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও টলেনি দেশটির সরকার।
হিজাব আইনে কোনো পরিবর্তন না এনে উল্টো নারীদের বাধ্যতামূলক পর্দা নীতিতেই অটল রয়েছে দেশটি। ইরানের এক সংসদ-সদস্য হোসেইন আলি হাজি দেলিগানি শনিবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচার বিভাগকে নারীদের হিজাব পরার নিয়ম লঙ্ঘন বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আলটিমেটাম জারি করেন।
নারীদের হিজাব পরিধানকে ‘ঐশ্বরিক আদেশ’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ইরানের পার্লামেন্টের সদস্যরা এ বিষয়ে আইনগত শূন্যতা পূরণে একটি বিল উত্থাপন করবেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই একই সুর তোলেন দেশটির বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি-ইজেই। ঘোষণা দেন, যে নারীরা মাথা ঢেকে রাখবেন না তাদের কোনো দয়া ছাড়াই বিচার করা হবে।
বৃহস্পতিবার ‘বাধ্যতামূলক’ হিজাবের প্রথম ইঙ্গিত দেয় দেশটির স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রনালয়। বিবৃতিতে জানায়, হিজাব ইস্যুতে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। হিজাব ইসলামি আইনের একটি অপরিহার্য উপাদান। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের একটি অন্যতম নীতি হিসাবে বহাল থাকার কথাও বলা হয় বিবৃতিতে। তবে এসব নিয়মের পরোয়া না করে কিছু সংখ্যক নারী এখনো নিয়ম ভঙ্গ করে চলেছেন।
ইরানে নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক। নারীরা জনসম্মুখে ঠিকমতো হিজাব পরছেন কিনা তা দেখতে দেশটিতে সক্রিয় ছিল নীতিপুলিশ নামে একটি বাহিনী।
গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর ‘হিজাব ঠিকমতো না পরার’ অভিযোগ তুলে নীতিপুলিশ মাহসা আমিনি (২২) নামে এক তরুণীকে তেহরানে আটক করেছিল। তিন দিন পর কোমায় থাকা অবস্থায় নীতিপুলিশের হেফাজতেই মারা যায় আমিনি। তার পরিবারের অভিযোগ ছিল, গ্রেফতারের সময় নির্যাতনের কারণেই অজ্ঞান হয়ে কোমায় চলে যায় মাহসা। এর পরই ইরানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র বিক্ষোভ।
টানা কয়েক মাসের ওই বিক্ষোভ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইরানের ইসলামি শাসনতন্ত্রের ভিত নাড়িয়ে দেয়। বিক্ষোভের মুখে নীতিপুলিশ বিলুপ্ত করে সরকার। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হয়নি বিক্ষোভকারীরা। তাদের দাবি ছিল, বাধ্যতামূলক হিজাব আইন প্রত্যাহার ও সরকার পতন। বিক্ষোভ দমনে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারী গুলিতে নিহত হয়। আর গ্রেফতার হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। তাদের মধ্যে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কার্যকরও হয়েছে কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড। এখন বিক্ষোভ অনেকটাই স্তিমিত। কিন্তু অনেক নারী এখনো জনসম্মুখে হিজাব না পরে বাধ্যতামূলক হিজাব আইন লঙ্ঘন করে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত নানা ভিডিও ও ছবি পোস্ট করছেন। যা বলে দিচ্ছে, সরকারের দমনপীড়নে বিক্ষোভ স্তিমিত হলেও ইরানের সমাজ ব্যবস্থায় এখনো হাতাশা ও ক্ষোভ বেশ ভালো মতোই রয়ে গেছে।