ইউরোপের ধনী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম লুক্সেমবার্গ। তীব্র যানযট দূর করতে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বাস, ট্রাম, ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহণ সবার (নাগরিক, পর্যটক) জন্য বিনামূল্যে করে দেয় দেশটি।
প্রথম কোনো রাষ্ট্র হিসাবে সেবাটি চালু করার ৩ বছর পার হয়ে গেছে। ফলও এসেছে হাতেহাতে ব্যক্তিগত গাড়ি ফেলে শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী সবাই চড়ছেন গণপরিবহণে। বিনা খরচে ভ্রমণ করতে পেরে খুশি দেশটির নাগরিকরাও। বিবিসি।
বিনামূল্যে পরিবহণ প্রকল্পটি লুক্সেমবার্গের গাড়ির সমস্যা নিরসনের জন্য চালু করা হয়েছিল। সে সময় (২০২০ সালে) ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে লুক্সেমবার্গেই গাড়ির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল। প্রতি ১ হাজার নাগরিকের মধ্যে ৬৯৬ জনেরই গাড়ি ছিল তখন। অর্থাৎ গড়ে ৫৬০ জনেরই গাড়ি ছিল।
এর ফলে মাত্রাতিরিক্ত ট্রাফিক এবং উচ্চমাত্রার কার্বন নির্গমনের শিকার হয় দেশটি। যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে জলবায়ু বিপর্যয় ডেকে আনে। সঙ্গে উচ্চমাত্রার শব্দ দূূষণ তো রয়েছেই। বর্তমানে এগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, বিনামূল্যে গণপরিবহণ ব্যবস্থার কারণে তারা এখন আর নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বাইরে যান না। প্রথম শ্রেণির পরিবহণে ভ্রমণ করার জন্য তাদের এখন শুধু একটি টিকিট কিনতে হয়।
প্রকল্পটির হিসাবরক্ষক এডগার বিসেনিয়াস বলেছেন, যেহেতু পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এখন বিনামূল্যে তাই মানুষ দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে তারা ব্যক্তিগত গাড়ি নাকি গণপরিবহণ বেছে নেবে। এর মানে হলো এটি পরিবেশের জন্য খুবই ইতিবাচক এবং ব্যবহারিক।
গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ গবেষক মার্লিন গিলার্ড বলেছেন, ব্যক্তিগত গাড়ির সংস্কৃতি এখনো বিদ্যমান। এর থেকে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে মানুষকে আকৃষ্ট করা এখনো বেশ জটিল। এছাড়াও যেহেতু এটি করোনা মহামারির সময় চালু করা হয়েছিল তাই এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিরূপণ করা কঠিন ছিল। প্রকল্পটির ওপর কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করে রাজধানী লুক্সেমবার্গ সিটির একজন শিক্ষক বেন ড্রাটউইকি বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এটি সাধারণ জনগণের পক্ষে যা দেশটির পাবলিক সেক্টরকে উন্নত করতে সহায়ক।
তিনি আরও বলেন, বিনামূল্যে গণপরিবহণ বাসিন্দাদের জন্য একটি মৌলিক অধিকার। আপনার যদি কাজ করার অধিকার থাকে। তবে আপনার বিনামূল্যে পরিবহণ সুবিধা পাওয়ারও অধিকার আছে। লুক্সেমবার্গে পূর্বে গণপরিবহণ থেকে টিকিট বিক্রির আয় ছিল ৪১ মিলিয়ন ইউরো। বর্তমানে বিনামূল্যে সমগ্র গণপরিবহণ চালাতে খরচ হয় ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি ইউরো। বিপুল এই খরচ আসে দেশটির উচ্চ করদাতাদের থেকে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাউশ বলেন, এটি একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প যার খরচ আসে কর থেকে। ফলে দেশের পরিবহণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ কমেনি। নতুন ট্রাম সিস্টেম নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে বর্তমানে রেল সেক্টরে বিনিয়োগের দিকেও নজর রয়েছে আমাদের।
লুক্সেমবার্গ গণপরিবহণ নিজ দেশ ছাড়াও ইউরোপের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ভালোভাবে সংযুক্ত। ফ্রান্সের সঙ্গে দেশটির আন্তঃসীমান্ত সংযোগ রয়েছে। যার কারনে এখান থেকে ট্রেনে প্যারিস যেতে মাত্র দুই ঘণ্টা ব্যয় হয়। দেশটি উচ্চগতির আইসিই ট্রেনের মাধ্যমে জার্মানির সঙ্গেও সংযুক্ত। যা রাজধানী থেকে সহজেই বেলজিয়ামের ব্রাসেলস পর্যন্ত যেতে পারে।
এর ফলে দেশটির সীমান্তবর্তী শহরে বসবাসকারী বাসিন্দারাও বিনামূল্যে পরিবহণ প্রকল্প থেকে উপকৃত হন। ফ্রান্স থেকে আসা গাউথিয়ার মউমকামা নামে এক কর্মী জানান, এটি সব সীমান্তে থাকা বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ করে বেলজিয়াম, জার্মানি এবং ফ্রান্সের জন্য সহজেই লুক্সেমবার্গ সুযোগ করে দিয়েছে। ফ্রান্সে এটি নেই।