
দক্ষিণ আমেরিকার একটি জনপ্রিয় ফুল পেটোনিয়া। পাঁচ থেকে দশ পাপড়ির গোলাপি রঙের ফুল। কৃত্রিম হাইব্রিড বৈশিষ্ট্যের জন্যই অতিরিক্ত পাপড়ি আর আকারে বেশ বড়। চটকদার রং, অসাধারণ কাঠামো আর ‘বিশাল’ আকৃতির কারণেই সাধারণত শহর বা বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনে রোপণ করা হয় এই ফুল।
একটি বিশেষ দুর্বলতাও রয়েছে এই পেটোনিয়া প্রজাতির। তবে গবেষকরা বিষয়টিকে দুর্বলতা বা অক্ষমতার বদলে ‘বৈশিষ্ট্য’ হিসাবেই আখ্যা দিয়েছেন। বাহারি এসব ফুলের মনোহরী সৌন্দর্য আর নয়নাভিরাম শোভায় মানুষের মোহ জাগলেও ভ্রমর বা মৌমাছি আকর্ষণের ক্ষমতা একেবারেই নেই। পরাগায়ন ঘটায় এমন কোনো কীটপতঙ্গও বসে না এর গায়ে। যে কারণে জনপদশোভনীয় এই ফুল থেকে মধুও সংগ্রহ করতে পারে না মৌমাছিগুলো।
পোর্টল্যান্ড, ওরেগন-ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা জোর্সেস সোসাইটির স্থানীয় উদ্ভিদ উপকরণ বিশেষজ্ঞ স্টেফানি ফ্রিচসি বলেন, ফুলকে আকর্ষণীয় আর বড় দেখানোর জন্যই দ্বিগুণ পাপড়ির প্রজাতি নির্বাচন করা হয়। কিন্তু তখন ফুলের পরাগায়নের জন্য আবশ্যক ’মধুভান্ডার’ই ঢেকে যায় পাপড়ি দ্বারা। হাইব্রিড দ্বিগুণ পাপড়ির জাত পেটোনিয়ার ক্ষেত্রেও ঘটেছে তাই। নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ফুলের প্রজাতি নির্বাচন করায় তা কীটপতঙ্গের কাছে ভোগান্তির কারণ হয়ে যায় বলে মনে করেন ফ্রিচসি। বিবিসি।
ফুল-ভ্রমর নিয়ে আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো বায়োলজিস্ট অধ্যাপক ডানিয়েল রোব্যার্ট। গবেষণায় তিনি ফুল ও পরাগ বহনকারীদের মধ্যে এই ‘জাদুময় সংযোগ’ পরীক্ষা করছেন। তার মতে, বেশ কিছুক্ষণ ধরে ফুলগাছগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে বোঝা যায় ভ্রমর মোটেই যে কোনো ফুলের ওপর নামে না।
যেসব ফুলে সবে অন্য পোকা বসেছিল, সেটি এড়িয়ে চলে। অনেক সময় ধরে যেসব ফুলে কোনো অতিথি আসেনি, ভ্রমর সেগুলোর খোঁজ করে। সেসব ফুল নেকটার বা মিষ্টি রসের আধার ভরার যথেষ্ট সময় পেয়েছে। আমার মনে হয়, ভ্রমর সেটা টের পায়, এমনটিই জানান অধ্যাপক ডানিয়েল রোব্যার্ট।
ভ্রমরের সঙ্গে ‘কথোপকথন’ শুনতে বিজ্ঞানীরা ফুলের কুঁড়ির মধ্যে অতি সংবেদনশীল পরিমাপ যন্ত্রের তার বসিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। যেটি ইলেকট্রিক ভোল্টেজকে শব্দে ‘অনুবাদ’ করে।
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লারা মন্টগোমারি বলেন, এটা আমাদের জাদুকাঠির মতো। অতি সাধারণ প্লাস্টিকের কাঠি। সবাই জানে, ফোলানো বেলুন ঘষলে চুল খাড়া হয়ে যায়। চুলের ওপর এই কাঠি ঘষলে যে চার্জ হয়, তা অনেকটা উড়ন্ত ভ্রমরের চার্জের মতো। এভাবে আমরা পরিমাপ যন্ত্রের পরীক্ষার জন্য ভ্রমর সিমুলেট বা নকল করছি। দূরত্ব অনুযায়ী শব্দ বেড়ে বা কমে যায়। সব যন্ত্রই ঠিকমতো কাজ করছে, এবার আসল ভ্রমর কাজে লাগানোর পালা। সেই পরীক্ষায় দেখা যায়, ভ্রমর ফুলের ওপর অবতরণ করলেই ফুলের সঙ্গে সেটির চার্জ ব্যালেন্স হয়ে যায়।
এর ফলে বাকি সব ভ্রমর বুঝতে পারে, এই কুঁড়িতে এরই মধ্যে অতিথি এসেছিল। অর্থাৎ সেখানে আর নেকটার নেই। নতুন করে নেকটার তৈরি করতে ফুলের সময় লাগে। সেই প্রক্রিয়ার সময়ে আবার নেগেটিভ চার্জ চলতে থাকে।