৯৫ শতাংশ ইউক্রেনীয় মনে করে যুদ্ধে তারাই জিতবে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:১৫ পিএম
গত এক বছরের প্রতিদিনই কিছু না কিছু হারিয়েছেন দেশটির নাগরিকরা। স্বামী হারানোর শোক, সন্তান হারানো ব্যথা, স্বজন হারানোর মায়া, সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যাওয়ার কষ্ট-রাত পার হয়ে দিন ফুটলেই কোনো না কোনো দুঃসংবাদ। আঘাতে আঘাতে বুকের পাঁজর ভেঙে গেছে। তবু আশা ছাড়েনি ইউক্রেন। ভাঙা বুকেই জয়ের স্বপ্ন বুনছেন নাগরিকরা।
গত সপ্তাহের এক জরিপে উঠে এসেছে এই চিত্র। ইউক্রেনের ৯৫ শতাংশ জনগণ এখনো বিশ্বাস করেন ‘তারাই জিতবে’। সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে ৯৭ শতাংশ। ইউক্রেনের নাগরিক আল্লা শস্তানা বলেন, ‘আমরা জানি কেন যুদ্ধ করছি। আমাদের যুদ্ধজয় নিশ্চিত।’ যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে তরুণপ্রজন্মের অংশগ্রহণ। নিহত এক সৈনিক আন্দ্রি (৩৪)। তার মা লিউডমিলা বিকাশ স্মরণ করছিলেন এক বছর আগের মার্চে তার ছেলের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদানের গল্প। মায়ের নিষেধাজ্ঞা ঠেকিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। মাকে বলেছিলেন, ‘আমি না গেলে আর কে যাবে মা?’ তার মায়ের মতে, আন্দ্রি ছিলেন একইসঙ্গে শ্রেষ্ঠ স্বামী, বাবা, সন্তান ও ভাই। ৬ জুন লিচিচানস্ক শহরের কাছে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে যুদ্ধ শুরুর পর তিন মাসেরও কম সময়ে রক্তক্ষরণে নিহত হন তিনি। কিয়েভের বারকোভেটস্কের একটি কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল তাকে। স্মৃতি সংরক্ষণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে মধ্য কিয়েভের একটি স্মৃতি উদ্যানে প্রয়াত স্বামীর নামসহ একটি নীল ও হলুদ পতাকা লাগান আন্দ্রির বিধবা স্ত্রী নাতালিয়া। তবে শত শত নতুন স্মৃতির মধ্যে হারিয়ে যায় তাদের এই পতাকা। বিকাশ বলেন, ‘পুরো তরুণপ্রজন্ম হারিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধে।
১৯ থেকে ২০ বছরের ছেলেরা মারা যাচ্ছে। তাদের থাকছে না কোন ভবিষ্যৎপ্রজন্মও।’ রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে আক্রমণের পর অনেকের শঙ্কা ছিল তিনদিনেই পুরো ইউক্রেন দখল করে ফেলবে রাশিয়া। কিন্তু পশ্চিমাদের সহায়তায় শত প্রতিকূলতার অতিক্রম করে এখনো টিকে আছে জেলেনস্কির দেশ ইউক্রেন। ইউক্রেন এখন আন্দ্রির মতো অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকের লড়াইয়ের মঞ্চ, ২১ শতকের ভয়াবহ যুদ্ধের সাক্ষী। যুদ্ধের ভবিষ্যৎও এখন অনিশ্চিত। ইউক্রেনের প্রসিকিউটরের মতে, ইউক্রেনে গত বছর মৃত বেসামরিক মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৫৫ জন। যার মধ্যে শিশু রয়েছে ৬৬১ জন। কিয়েভের যুদ্ধ শুরুর গল্প ছিল ভয় ও আতঙ্কের। ভয় কাটিয়ে এখন বিজয়ে বিশ্বাস করে পুরো জাতি। শহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ, ট্রেন চলাচল, নেটওয়ার্কও কিছুটা স্বাভাবিক। ইউক্রেনের জনগণের নতুন সাহস সঞ্চার করে গত সপ্তাহে জো বাইডেনের কিয়েভ সফর। সাবেক সাংবাদিক ও সংসদীয় ডেপুটি সেরহি লেশচেস্কো জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমার্ককে পরামর্শ দেওয়ার সময় দেরয়ার বলেন, ‘ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে জয়লাভ করেছে ইউক্রেন।’ তার মতে, স্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকার নিয়ে টিকে আছে ইউক্রেন। রাশিয়ার দখলকৃত ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল পুনরায় ইউক্রেনের হাতে চলে আসতাকেই হয়তো দেশের বিজয় বলে সম্বোধন করছেন তিনি।