Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের শো-অফ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৫:০৭ পিএম

যুদ্ধের বর্ষপূর্তিতে চীন-রাশিয়া সম্পর্কের শো-অফ

মস্কো সফরকালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ওয়াং ই’র সঙ্গে করমর্দন করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এপি

রাশিয়া ও চীন বুধবার তাদের গভীর সম্পর্ক প্রদর্শন করেছে, যখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে সিনিয়র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক কর্মকর্তা মস্কো সফর করেন। স্বাভাবিক কারণেই অন্যরা মনে করছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ক্রেমলিনকে শক্ত সমর্থন দিতে পারে বেইজিং।

শীতল যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যকার সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। অপরদিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনের সঙ্গে করা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিত করেছে মস্কো। রাশিয়ার এ পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে ওয়াশিংটন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করতে পারে চীন। 

চীনা কূটনীতিক ওয়াং ই মস্কো সফরে গেলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভূষসী প্রশংসা করেছেন। এমনকি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়া সফর করবেন বলে আশা করছে ক্রেমলিন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, আগামী এপ্রিল অথবা মে মাসের শুরুতে মস্কো যেতে পারেন চীনা নেতা।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে রুশ নেতা ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক উত্তেজনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেছেন, এই প্রেক্ষাপটে চীন ও রাশিয়ার সহযোগিতা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ওয়াং ই বলেছেন, ‘চীনা-রাশিয়ার সম্পর্ক তৃতীয় কোনো দেশের বিরোধিতার জন্য নয়, একইসঙ্গে তা তৃতীয় কোনো দেশের চাপও মেনে নেবে না।' 

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে বুধবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন ওয়াং। ওই সময় ল্যাভরভ বলেছেন, আমাদের সম্পর্ক গতিশীলতার সঙ্গে জোরদার হতে চলেছে। বিশ্ব অঙ্গনে তীব্র অশান্তি সত্ত্বেও আমরা একে-অপরের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয়তা দেখিয়েছি।

ইউক্রেন ইস্যুতে ক্রেমলিনকে উস্কানি দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোকে দায়ী করেছে চীন। সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সমালোচনাও করেছে বেইজিং। কিন্তু ইউক্রেনে পুতিন প্রশাসনের হামলার সমালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রটি।

রাশিয়ার পক্ষ থেকে নিউ স্টার্ট ট্রিটি চুক্তি স্থগিত করার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেছেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ চুক্তি অতি গুরুত্বপূর্ণ। বেইজিং আশা করে, দুই পক্ষ তাদের মধ্যকার মতপার্থক্যগুলো যথাযথভাবে সমাধান করবে।

অপরদিকে তাইওয়ান ইস্যুতে চীন-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছে রাশিয়া। শুধু তাই নয়, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দুই দেশ তাদের গভীর সম্পর্ক প্রদর্শন করছে সামরিক মহড়ার মাধ্যমে। চীন, রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ভারত মহাসাগরে চলতি সপ্তাহে নৌ মহড়ার আয়োজন করছে।

দুই দেশের এই মাখামাখিকে ভালোভাবে নিচ্ছে না পশ্চিমা বিশ্ব। উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ক্রেমলিনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় চীনের যেকোনো অংশগ্রহণ একটি ‘গুরুতর সমস্যা’ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

এদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গও বুধবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সহায়তা দিতে পারে- তাদের কাছে এমন ইঙ্গিত রয়েছে। পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ-তে বার্তা সংস্থা এপির প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি। চীন এমন উদ্যোগ নিলে তা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হবে উল্লেখ করে ন্যাটোপ্রধান বেইজিংকে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকার জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।

চীনের সরকার-সমর্থিত বিশেষজ্ঞরা মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের বিষয়ে ওয়াশিংটনের সতর্কতা প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেই সঙ্গে তারা মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিকে মেরুকরণ ও বিকৃত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

চীনা একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের রাশিয়ান, ইস্টার্ন ইউরোপিয়ান এবং সেন্ট্রাল এশিয়ান স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সহযোগী গবেষণা ফেলো ঝাং হংকে উদ্ধৃত করে গ্লোবাল টাইমস বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতকে ‘রঙিন চশমার মাধ্যমে দেখেছে’।

ইংরেজি ভাষার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটি ঝাংকে উদ্ধৃত করে আরও বলেছে, ‘বিষয়টা যেন এমন যে, কেউ যদি রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে, তাহলেই সে ইউক্রেন দ্বন্দ্বে মস্কোর পক্ষ নিল।’

বার্তা সংস্থা এপি বলছে, যুদ্ধ কিভাবে বিপজ্জনকভাবে নতুন ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার আরেকটি উদাহরণ হলো চীন ও রাশিয়ার মধ্যকার ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম