উত্তর সাগরে, যা জাপান সাগর নামেও পরিচিত, ২০২২ সালের অক্টোবরে পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার চলমান যুদ্ধ নিয়ে এমনিতেই বিশ্বে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর মধ্যেই হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কোরীয় উপদ্বীপ। মূলত, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, সোমবার সকালে কিম জং উনের দেশ উত্তর কোরিয়া কোরীয় উপদ্বীপের জলসীমায় আরও দুটি ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। এর আগে শনিবার একটি দীর্ঘপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় দেশটি।
জাপানের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এবং কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ধারণা করা হচ্ছে— দুটি ক্ষেপণাস্ত্র স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৭টার দিকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র দুটি কোরীয় উপদ্বীপের পূর্বে জাপান সাগরে পতিত হয়েছে। তবে এগুলো জাপানের বিশেষায়িত (এক্সক্লুসিভ) অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে পড়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং এটিকে সুপার-লার্জ মাল্টিপল রকেটলঞ্চার এক্সারসাইজ বলে অভিহিত করেছে। যাকে মূলত, কৌশলগত পারমাণবিক হামলার সঙ্গে তুলনা করা যায়।
উত্তর কোরিয়া বলছে, দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বিমান মহড়ার জবাবে এই অনুশীলন পরিচালনা করা হয়েছে।
এর আগে রোববার যৌথ বিমান মহড়া চালায় দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে ‘নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়ার’ যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তার জবাবে এই মহড়া চালানো হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, রোববারের মহড়ায় উভয়দেশের এফ-৩৫, এফ-১৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। আর এসব বিমানের নিরাপত্তায় (এস্কর্ট) যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনীর বি-১বি বোমারু বিমান মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া জাপানও যৌথ মহড়ায় অংশ নেয়।
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, আসছে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে যৌথ মহড়ার পরিকল্পনা করছে সিউল ও ওয়াশিংটন। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া বিষয়টি জানিয়ে বলে, সম্ভবত এটি হচ্ছে— দুই দেশের মধ্যকার এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে বড় যৌথ মহড়া।
সিউলের পক্ষ থেকে এমন তথ্য জানানোর পরই ক্ষেপে যায় পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে গত শুক্রবার হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র যদি এমন মহড়া চালানোর দিকে অগ্রসর হয়, তা হলে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে। এর পর দিন শনিবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় দেশটি।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাবে রোববার যৌথ মহড়া চালায় দক্ষিণ কোরিয়া ও তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। আর এর জবাবে আজ সোমবার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল কিমের দেশ। অর্থাৎ মহড়া ও পাল্টা মহড়ায় হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কোরীয় উপদ্বীপ।