বন্দুকের নলের মাথায় ঝুলছে ইউক্রেন। জীবন আর মৃত্যুর মাঝে কেবলই একটা বুলেট দূরুত্ব। বড়জোর একটা ক্ষেপণাস্ত্র। ঘুম ভাঙতেই ভয় শুরু-স্বজন হারানোর ভয়, প্রাণ যাওয়ার ভয়, অঙ্গহানির ভয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলার পর থেকেই মাঠ-ঘাট-সড়ক, শহর-অজোপাড়া গাঁয়ের শিরা-উপশিরায় জেঁকে বসেছে এই আতঙ্ক। বিশেষ করে পুরুষদের। নারী-শিশুদের বেশিরভাগই তো বিপদের আশ্রয় নিয়েছে অন্যের দেশে। সাহস করে যারা থেকে গেছেন, পুরুষদের সহায়তায় তারাও বেছে নিয়েছে ভিন্ন জীবন। যুদ্ধের তহবিল সংগ্রহে হাতে তুলে নিয়েছে সুচি-শিল্প। ধ্যান-জ্ঞান-চোখ-সবই সেই সুঁইয়ের ডগায়। ফোঁড়ে ফোঁড়ে গাঁথছেন জন্মভূমির মায়া।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক সংকট ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ’। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সাধারণ নাগরিকরাও মরিয়া রাশিয়াকে ঠেকাতে। সম্প্রতি ইউক্রেনের নারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের হাতে তৈরি এমব্রোয়ডারি পণ্য বিক্রি করে তহবিল গঠন করছেন। তহবিলের এই অর্থ যাচ্ছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা ইউক্রেনীয় সেনা, স্বেচ্ছাসেবক ও শরণার্থীদের কল্যাণে।
আলা টিমোসনেকো নামের এক নারী জানান, তার কাছে এমব্রোয়ডারি হলো সৃষ্টিশীল কর্মকে ফুটিয়ে তোলার এক অন্যতম মাধ্যম। তিনি ইউক্রেনকে সমর্থনের পন্থা হিসাবে ইউক্রেনের জাতীয় পতাকার রং নীল ও হলুদ সুতার নকশায় পিতৃভূমির লোকজ সংস্কৃতি, কবিতা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বিষয় তুলে ধরে এমব্রোয়ডারিং শুরু করেন। বর্তমানে তিনি তার শিল্পকর্মগুলো ইনস্টাগ্রামে বিক্রি করে ইউক্রেনীয়দের সাহায্য করার পরিকল্পনা করেন। যা তার কাছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের বিজয়ের আশার প্রতীক।
ইউক্রেনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘ভৈশ্যভাঙ্কা’, যা দেখতে অনেকটা টি-শার্ট বা ব্লাউজের মতো। যেখানে এর নকশাগুলো মূলত থাকে হাতা, গলা ও বুকের দিকে। আলা তার এমব্রোয়ডারির কাজগুলো ইউক্রেনের পক্ষে বিভিন্ন কবিতার মতো করে এই পোশাকে তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, ভৈশ্যভাঙ্কা ইউক্রেনীয়দের কাছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী প্রতীককে ফুটিয়ে তোলার এক বিশেষ মাধ্যম।
মেরিনা রোমাশকো (৩৮) ২০২২-এর মার্চে ইউক্রেনের শহর দিনপ্রোতে মিসাইল হামলার সম্মুখীন হন। এরপর তিনি জর্জিয়ায় শরণার্থী হিসাবে চলে আসেন। তিনি জানান, জর্জিয়ায় আসার সময় একটি ভৈশ্যভাঙ্কা নিয়ে আসেন, যা তার ইউক্রেনীয় পরিচয় ও তার বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়।