মাদক খাইয়ে নারীদের নিপীড়ন, 'জিলিপি বাবার' ১৪ বছরের জেল
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:০৯ পিএম
দিল্লির পার্শ্ববর্তী রাজ্য হরিয়ানার টোহানা শহরের বহুল আলোচিত জিলিপি বাবাকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে আদালত ১৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
হরিয়ানা রাজ্যের ফতেহাবাদ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গত ৫ জানুয়ারি জিলিপি বাবা নামে পরিচিত ওই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে। খবর বিবিসির।
জিলিপি বাবা অমরপুরী আর বিল্লু রাম নামেও পরিচিত। তার বিরুদ্ধে নারীদের যৌন নিপীড়ন করে সেগুলো ভিডিও করার অভিযোগ ছিল।
পরে এসব ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীদের তিনি ব্ল্যাকমেইলও করতেন।
নির্যাতিত নারীরা পরিবারের কাউকে বিষয়টি জানাতেন না লজ্জায়। কিন্তু ২০১৭ সালে এক নারী পুলিশের কাছে প্রথম অভিযোগ জানান। তারপরেই গ্রেফতার হন ওই 'জিলিপি বাবা'।
পাঞ্জাবের মনসায় জন্মগ্রহণ করা বিল্লু রাম আট বছর বয়সেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। ঘুরতে ঘুরতে সে পৌঁছায় দিল্লি, যেখানে দিগম্বর রামেশ্বর নামে এক 'বাবা'র সঙ্গে তার দেখা হয়।
পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানে বিল্লু রাম জানান, ওই দিগম্বর রামেশ্বরকে নিজের গুরু মেনে তার সঙ্গে উজ্জয়নে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রায় দশ বছর ছিলেন তিনি।
তারপরে নিজের গ্রাম মনসায় ফিরে আসেন বিল্লু রাম। তার বিয়েও হয় সেখানে। রোজগারের আশায় পাঞ্জাব থেকে হরিয়ানার টোহানা শহরে পৌঁছন বিল্লু রাম। একটা ঠেলা গাড়িতে জিলিপি বিক্রি করতে শুরু করেন বিল্লু রাম।
বছর কুড়ি আগে নিজের বাড়িতেই একটা মন্দির বানায় বিল্লু রাম। ওই মন্দিরে বসেই তিনি নারীদের নানা সমস্যার কথা শুনে তার সমাধানের পথ বলে দিতেন। এই সময়েই বিল্লু রাম থেকে তিনি জিলিপি বাবা হয়ে ওঠেন।
জিলিপি বাবার মন্দিরে শারীরিক এবং মানসিক দুই ধরণের নারী রোগীরাই আসতেন। হরিয়ানার নিজের বাড়ির মন্দিরেই নারীদের যৌন নির্যাতন করতেন 'জিলিপি বাবা'।
কোনো একটা 'মন্ত্র' পড়ে নারীদের সুস্থ করে তুলতেন বলে দাবি করতেন জিলিপি বাবা। আর সেই সময়েই চা বা অন্য কিছুর সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাইয়ে দিতেন রোগীদের। নেশা হয়ে যাওয়ার পরে ওই নারীদের ওপরে যৌন নির্যাতন চালাতেন, এমনটাই অভিযোগপত্রে জানিয়েছিল পুলিশ।
বিল্লু রাম ওরফে জিলিপি বাবার বিরুদ্ধে পুলিশের আরও অভিযোগ, মন্দিরে লাগানো গোপন ক্যামেরায় ওই যৌন নির্যাতনের ভিডিও রেকর্ড হয়ে থাকত। আর ওই ভিডিও প্রকাশ করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে নির্যাতিতা নারীদের আবারও ব্ল্যাকমেইল করতেন ওই কথিত জিলিপি বাবা।
নারীরা ছাড়া নাবালিকাদেরও নিজের শিকার বানাতেন জিলিপি বাবা আর প্রত্যেকের কাছ থেকে মোটা অর্থ আদায় করতেন তিনি।
লোকলজ্জার ভয়ে নির্যাতিতা নারীরা পুলিশের কাছে বা নিজের পরিবারের কাছেও মুখ খুলতেন না।
কিন্তু ২০১৭ সালের ১৩ অক্টোবর একজন নারী পুলিশের কাছে প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন।
তিনি এও অভিযোগ করেছিলেন যে তার সঙ্গে যা করা হয়েছে, সেই অশ্লীল ভিডিওটি ওই 'জিলিপি বাবা' ভাইরাল করে দিয়েছেন।
ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারার সঙ্গেই 'জিলিপি বাবা'র ওপরে মাদক আইন ও অস্ত্র আইনেও মামলা দায়ের করে পুলিশ। মন্দির থেকে উদ্ধার হয় মাদকও।
আদালত সেই সব প্রমাণ বিচার করেই জিলিপি বাবা হয়ে ওঠা বিল্লু রামকে ১৪ বছরের জেলের সাজা দিল।