
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৩ পিএম
‘মাতাল’ সঙ্গীকে বেশি পছন্দ করে স্ত্রী ফলমাছিরা!
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৩ পিএম

আরও পড়ুন
ফলের মাছিদের মধ্যে যেসব পুরুষ মাছি অ্যালকোহল পান করে এরা নারী মাছিদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়, যদি পুরুষ মাছির খাবারে অ্যালকোহল যুক্ত করা হয় তবে তারা আরও রাসায়নিক নির্গত করে যা নারীদের আকর্ষণ করে।তাছাড়া এটি পুরুষ মাছির প্রজনন স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়। আর প্রজননের জন্য তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষাও বেড়ে যায়।
ফলের মাছি বা ‘ড্রসোফিলা মেলানোগ্যাস্টার’ নামের মাছিরা বেশিরভাগ সময়ই খাবারের আবর্জনার আশপাশে ঘোরাফেরা করে। কারণ এরা পচা ফল খায়, যা ধীরে ধীরে অ্যালকোহল তৈরি করে।
কী উঠে এল গবেষণায়
বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন কেন নারী মাছিরা অ্যালকোহলের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং এটি কীভাবে তাদের প্রভাবিত করে।এর আগে গবেষণায় স্ত্রী মাছির আকর্ষণের বিভিন্ন তত্ত্ব পরীক্ষা করা হয়েছিল।
‘ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট’-এর ‘ইভোলিউশনারি নিউরোইথোলজি’ বিভাগের প্রধান গবেষক বিল হ্যানসন বলেছেন, আগের বিভিন্ন গবেষণায় মাছির আচরণ সম্পর্কে একটি নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া হয়েছে। তবে সর্বশেষ এ গবেষণায় উঠে এসেছে, অ্যালকোহল পান করলে মাছিরা প্রজননে সুবিধা পেয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি না মাছিরা বিষণ্ণতার কারণে মদ পান করে।’
তিনি আরও বলেছেন, পচা ফলের কার্বোহাইড্রেট ও ইস্টের প্রতি যেমন, তেমনি অ্যালকোহলের প্রতিও মাছিদের আকর্ষণ কাজ করে।
অ্যালকোহল মাছির প্রজনন বাড়ায়
গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালকোহল, বিশেষ করে মিথানল পুরুষ মাছিদের দেহে ‘ফেরোমোন’ নামের এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যৌন সংকেত তৈরি ও এর নিঃসরণকে বাড়িয়ে তোলে, যাতে আকৃষ্ট হয় নারী মাছি।
গবেষকরা বলছেন, তাই পুরুষ মাছিরা অ্যালকোহলের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, বিশেষ করে সেইসব পুরুষ মাছি যারা কখনও প্রজননে অংশ নেয়নি।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে অ্যালকোহলের গন্ধে মাছির প্রতিক্রিয়া তার মস্তিষ্কের তিনটি ভিন্ন নিউরাল সার্কিট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
নতুন গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, অ্যালকোহলের গন্ধে মাছিদের সাড়া দেওয়ার বিষয়টি এদের মস্তিষ্কের তিনটি ভিন্ন নিউরাল সার্কিটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়।
এর মধ্যে দুটি সার্কিট অল্প পরিমাণে অ্যালকোহলে আকৃষ্ট করার জন্য দায়ী হলেও তৃতীয় সার্কিটটি নিশ্চিত করে যে, অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা হচ্ছে না।
গবেষকরা বলছেন, অ্যালকোহল বিষাক্ত, ফলে মাছির মস্তিষ্ককে এটি পানের ঝুঁকি ও উপকারিতা দুটি বিষয়ই সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি আকর্ষণের সংকেত ও অ্যালকোহলের প্রতি বিতৃষ্ণার ভারসাম্যও বজায় রেখে চলতে হয় মাছিদের।
গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কা’র ইয়ান কেইসি বলেন, যার মানে হচ্ছে, মাছিদের একটি নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা অ্যালকোহলের কারণে তৈরি নেশার ঝুঁকি ছাড়াই এদের অ্যালকোহল পানের সব ধরনের সুবিধা দিচ্ছে।
গবেষণার জন্য মাছিদের নিয়ে করা সব ধরনের শারীরবৃত্তীয় গবেষণা একত্র করেছেন গবেষকরা।
যেমন– মাছির মস্তিষ্কের বিভিন্ন প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে তা কল্পনা করার জন্য ইমেজিং কৌশল, এদের ওপর পরিবেশগত গন্ধের রাসায়নিক বিশ্লেষণ ও আচরণগত নানা বিষয়।
গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।
বিবিসি উর্দু থেকে অনুবাদ