
প্রিন্ট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৭ এএম
ভারতে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে হলো রথযাত্রা

বিবিসি
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৪৬ পিএম

আরও পড়ুন
দক্ষিণ ভারতের কেরালার রাজধানী থিরুভানান্থাপুরামের ব্যস্ততম বিমানবন্দর থিরুভানান্থাপুরাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সোমবার হঠাৎ করেই সেখানে উড়োজাহাজের ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনা বা খারাপ আবহাওয়ার কারণে নয়, হিন্দু মন্দিরের এক শোভাযাত্রার কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য ফ্লাইট বন্ধ থাকে। ঐতিহ্যবাহী এই রথযাত্রা গিয়েছিল রানওয়ের ভেতর দিয়ে। তাই সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল উড়োজাহাজ ওঠানামা।
পাইনকুনি উৎসব কেরালার শত বছরের পুরোনো উৎসব। তামিল ক্যালেন্ডারে ‘পাইনকুনি’ মাসে— যা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে মার্চ-এপ্রিল মাসে পড়ে— ১০ দিনব্যাপী এ উৎসব হয়। বিশেষ এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে খুব পবিত্র মনে করা হয়। উৎসবের মূল আকর্ষণ এর শেষ দিন। এই দিনে অনুষ্ঠিত হয় রথযাত্রা।
মহাভারতের পাঁচ ভাই পঞ্চপাণ্ডবের বিশালাকৃতির কুশপুত্তলিকা নিয়ে বের হয় রথযাত্রাটি। প্রতিটি মূর্তির উচ্চতা হয় কমপক্ষে ৩০ ফুট। কুশপুত্তলিকাগুলোকে রথে করে থিরুভানান্থাপুরাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্য দিয়ে শঙ্ঘুমুগম সমুদ্র সৈকতে নেওয়া হয়।
সেখানে নিয়ে গিয়ে দেবমূর্তিগুলোকে ‘পবিত্র স্নান’ করানো হয়। এই শোভাযাত্রায় রাজপরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি অংশ নেন পুরোহিতরা এবং বিশেষ কিছু ভক্ত ও হাতি। ১৯৩২ সালে বিমানবন্দরটি তৈরি হওয়ার বহু বছর আগে থেকেই এই পথেই সৈকতে যেত রথটি। পরে সে পথ পরিবর্তন করা হয়নি। ঐতিহ্যও বদলায়নি; প্রতিবছর এই উৎসবের সময় মন্দিরযাত্রার পথ হয়ে ওঠে এই রানওয়ে।
রথযাত্রার পৃষ্ঠপোষক রাজপরিবারই বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। পরে কিছুদিন বিমানবন্দরটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেড এটি পরিচালনা করে।
ধর্মীয় কারণে বিমানবন্দরের রানওয়ে বন্ধ থাকার ঘটনা বিশ্বে তেমন একটা দেখা যায় না। ভারতের কেরালা ছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও ইসরাইলে এরকম চর্চা আছে। বালিতে হিন্দু নববর্ষে এবং ইহুদিদের পবিত্র দিন ‘ইয়োম কিপুরে’ বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। তবে ওইসব দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করে বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়।
কেরালাতে ঠিক ঘটে ঠিক উল্টোটা, নিরাপত্তা-ঘেরা রানওয়ের মধ্য দিয়েই যায় পূজাযাত্রা—যা পুরো বিশ্বে নজিরবিহীন। শোভাযাত্রার সময় আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুটি টার্মিনালই সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। তবে এ বিষয়ে এয়ারলাইনগুলোকে আগেই জানানো হয়।
বিমানবন্দরের চিফ এয়ারপোর্ট অফিসার রাহুল ভাটকোটি বিবিসিকে বলেন, ঐতিহাসিক শোভাযাত্রাকে বিমানবন্দরের সম্মান জানানো আমাদের জন্য সৌভাগ্যের, গর্বের বিষয়— এমন নজির অন্য কোথাও নেই।