ভারতের কলকাতায় চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। নিজেদের অধিকার ও সুষ্ঠু বিচারের আশায় মাঠ ছাড়েননি অনেকেই।
এবার প্রতিবাদী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে সরাসরি মঞ্চে উঠলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শনিবার সকালে আচমকা কলকাতার সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চে গিয়ে ওঠেন তিনি।
খানিক সহানুভূতির সুরে মমতা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আজ আমি আসিনি। এসেছি আপনাদের দিদি হিসেবে। জাস্টিস পাবেন, ভরসা রাখুন।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমার পোস্ট বড় কথা নয়। মানুষের পোস্ট বড় কথা। আমি চাই তিলোত্তমার বিচার হোক। তিন মাসের মধ্যে যেন ফাঁসির অর্ডার দেওয়া হয়।’
চিকিৎসক আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ ডা. অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘দাবির সঙ্গে আপস নয়।’
তার কথায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান ডাক্তাররা।
ডাক্তারদের স্পষ্ট বক্তব্য, তারা ইস্যু ধরে ধরে পাঁচ দফা দাবিতে আলোচনা করবেন। অনিকেত মাহাতো আরও বলেন, এখনই আন্দোলন থেকে পিছপা হতে তারা নারাজ।
তার সাফ দাবি, ‘আন্দোলন যে স্পিরিট নিয়ে চলছিল সেভাবেই চলবে। আমরা আমাদের ৫ দফা দাবি নিয়ে যে কোনো জায়গায় আলোচনায় বসতে চাই। দ্রুত কাজেও ফিরতে চাই। আমরা কোনো অন্যায় দাবি করছি না। এই দাবি নিয়ে আমরা আলোচনায় বসতে চাই। এই ৫ দফা নিয়ে আমরা কোনো রকম সমঝোতায় যেতে এখনো রাজি নই।
পাশে দাঁড়িয়ে আরেক আন্দোলনকারী বললেন, ‘তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা নিজেরা আলোচনা করব। সেই অনুযায়ী জানাব। আমরা সবসময় চাই আলোচনা করতে। কারণ আমরা চাই এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হোক।
এ সময় অপর একজন বলে উঠলেন, ‘তার এই পদক্ষেপকে সদর্থক ভূমিকা হিসেবে দেখছি। স্বাগত জানাচ্ছি। তবে ন্যায়বিচারের ৫ দফা দাবিতে আমরা কোনো সমঝোতা করব না। মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন, আলোচনার সদিচ্ছা জানাচ্ছেন। আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমরা অচলাবস্থা কাটাতে চাই। আমরা চাই এখনি তিনি আলোচনার টেবিলে বসুন। মিডিয়ার সামনেই সব হোক। আমরা চাই আমাদের দাবি তিনি মেনে নিন।’
আরও এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমরা দিদি হিসেবে মমতাকে চাইনি। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি আসুন। কেননা দিদির থেকে তো মুখ্যমন্ত্রীর পদ বড়। আর আলোচনা হলে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের বিষয়ে আমরা অনড়।’
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় নবীন চিকিৎসকদের চলমান কর্মবিরতির কারণে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার মমতা ঘোষণা দিয়েছেন, এই ২৯ জনের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তবে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা মমতার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নবীন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে রাজ্য সরকার দুই লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেবে।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে নবীন চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতি চলছে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। আরজি কর হাসপাতালে এক চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে তারা আন্দোলন করছেন। বর্তমানে চিকিৎসকরা সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
শুক্রবার ছিল তাদের অবস্থান কর্মসূচির চতুর্থ দিন। রাজ্যের সব মেডিকেল কলেজ ও সরকারি হাসপাতালের নবীন চিকিৎসকরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।