আম্বানি পরিবারের ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা। ধনীর তালিকায় যিনি বিশ্বে একাদশ আর এশিয়ার মধ্যে এক নম্বরে রয়েছেন। ফোর্বসের তালিকায় আম্বানির সম্পত্তির পরিমাণ ১২৩.৭ বিলিয়ন ডলার। এ বিলিয়নিয়ারের ছেলে অনন্ত আম্বানি ও বিনোদ মার্চেন্টের কন্যা রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ে হয়েছে । তিন দিনব্যাপী বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে শুরু হয় ১২ জুলাই । সেদিনই অনন্ত-রাধিকার বিয়ে হয়। মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে বসে তাদের বিয়ের আসর। মুম্বাইতে তাদের প্রাক-বিবাহের আচার-অনুষ্ঠানের সংগীতে হাজির ছিলেন জাস্টিন বিবার। গান গেয়েছেন শ্রেয়া ঘোষাল, সোনু নিগম, শঙ্কর মহা দেবন, হরিহরণ, কৌশিকী চক্রবর্তী প্রমুখ।

এ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন দেশ-বিদেশের নামিদামি তারকা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা। একাধিক হাইপ্রোফাইল অতিথি এসেছিলেন মুম্বাইতে। ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, ঠাকরে পরিবার এবং দেবেন্দ্র ফড়নবিসরা। আমেরিকা থেকে এসেছিলেন প্রিয়াংকা চোপড়া। এ ছাড়া আসেন আমেরিকান মডেল কিম কার্দাশিয়ান ও তার বোন ক্লোয়ি কার্দাশিয়ান। আরও এসেছিলেন ঐশ্বরিয়া রাই, সালমান খান, রেখা, অমিতাভ বচ্চন, দীপিকা পাড়ুকোন, রণবীর কাপুর, যাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক একসময়ে বহু মানুষের কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল।

এর আগে গত ৩ জুলাই থেকে উৎসবে পরিণত হয় এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির বাড়ি। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের অল্টমাউন্ড রোডে পৃথিবীর অন্যতম দামি বাড়ি ‘অ্যান্টিলিয়া’। চার লাখ বর্গফুটের বাড়িটি ২৭ তলা ও উচ্চতা ৫৭০ ফুট। সেই বাড়ির সামনেই তারকাদের ভিড়। উপলক্ষ্য ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির বিয়ে। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট অনন্ত আম্বানি। সেদিক থেকে বাড়ির শেষ বিয়ে, তাই কোনো কিছুই বাদ রাখেননি মুকেশ ও নীতা আম্বানি। 

এর আগে এ দম্পতি ২০২২ সালে রোকা করেন। ২০২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাগদান সারেন। পরে তাদের দুটি প্রাকবিবাহের অনুষ্ঠান হয়। এ দুটি অনুষ্ঠানেই বসেছিল চাঁদের হাট। হলিউড থেকে বলিউডের তারকাদের উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের শিল্পপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও খেলোয়াড় পরিবারসহ হাজির ছিলেন এ অনুষ্ঠানে। প্রাকবিবাহের প্রথমটি গুজরাটের জামনগরে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তাহব্যাপী। সেই অনুষ্ঠানে বিল গেটস, মার্ক জুকারবার্গসহ সারা বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়েছিলেন। এ অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী রিহানা গান গেয়েছিলেন।

দ্বিতীয় প্রাকবিবাহের অনুষ্ঠান উদযাপন করেন ইউরোপের ইতালিতে। সেখানে একটি ক্রুজ করে চার দিন ধরে ভূমধ্যসাগরে ঘোরেন তারা। টোগা পার্টি এবং মাস্করেড বলের মতো ইভেন্টের আয়োজন করা হয়। কেটি পেরি, ব্যাকস্ট্রিট বয়েজ এবং পিটবুলের পারফরম্যান্সও ছিল সেখানে।

সব অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রাকবিবাহ অনুষ্ঠান মাতিয়েছিলেন জাস্টিন বিবার, শাহরুখ খান, সালমান খান, রণবীর সিং, হৃতিক রোশন, হার্দিক ধোনি, রোহিত শর্মা, হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমার যাদব প্রমুখ।

ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদন অনুসারে জানা গেছে, মুকেশ আম্বানি ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানির বিবাহ উপলক্ষে পরবর্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন লন্ডনে। পরিবার ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে সে উৎসব পালন করা হবে।

তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন নীতা আম্বানি। গোলাপি শাড়িতে ঝলমল উজ্জ্বল মুকেশ ঘরণী পরিবারের মতো বিয়ের প্রতিটা অনুষ্ঠানে শামিল হওয়ার জন্য সংবাদকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। এরপর হাত জোড় করে বলেন— ‘বিয়েবাড়ি তো, কিছু ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন সবাই’। শুধু তাই নয়, সোমবার ছেলে অনন্তের বিয়ের পরবর্তী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সপরিবারে আমন্ত্রণও জানান মুকেশ ঘরণী।
নীতা বলেন, ‘আপনারা ধৈর্য ধরে বোঝার জন্য ধন্যবাদ। যদি কিছু হয়ে থাকে, তবে দয়া করে আমাদের ক্ষমা করবেন। কারণ এটি একটি বিয়েবাড়ি, ভুল হতেই পারে, ক্ষমা করবেন। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই নিশ্চয়ই কালকের (সোমবার) জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন। আগামীকাল (আজ) আপনারা আমাদের অতিথি, পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আসবেন’। 

নীতার এই ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে আসতেই হু হু করে ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা মুগ্ধ নীতার নম্র ব্যবহারে। একজন লেখেন— ‘ব্যাংকে টাকা থাকলেই হয় না, এমন ব্যবহারও থাকতে হয়; তবেই না তুমি ধনী’। 

এর আগে অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের আসরে বিদেশ থেকে আসা অতিথিদের আনতে তিনটি ফ্যালকন-২০০০ জেট বিমান ভাড়া করে আম্বানি পরিবার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অতিথিদের বিয়ের আসরে উড়িয়ে নিয়ে আসে এ বিশেষ ধরনের চাটার্ড বিমান। প্রতি ঘণ্টায় যার বিমান ভাড়া গুনতে হয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এয়ার চার্টার সংস্থার সিইও রাজন মেহরা জানান, বিয়ের আসরে অতিথিদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আম্বানি পরিবার তার কোম্পানি থেকে তিনটি ফ্যালকন-২০০০ বিমান ভাড়া করে। তিনি এক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, অতিথিরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছেন এবং প্রতিটি বিমান সারা দেশে একাধিকবার যাতায়াত করবে। শুধু এই তিনটি জেট বিমানই নয়, আরও ১০০ বিমান অতিথিদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে বলেও জানান রাজন মেহরা।