বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে জেল খাটা উবায়দুল মোকতাদির মন্ত্রিসভায়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম
টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়ে নতুন এই মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে তাদের শপথ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
নতুন মন্ত্রিসভায় এবার প্রথমবারের মতো ১৪ জন যুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তবে নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাবেন সেটি শপথের পর জানা যাবে।
ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা। মুক্তিযুদ্ধে ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। এরপর করেছেন সরকারি চাকরি। অবসর নিয়ে আবার রাজনীতিতে। হয়েছেন চারবারের সংসদ সদস্য। বর্ণাঢ্য সেই রাজনৈতিক জীবনেরই যেন প্রতিদান পেলেন র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের এই সংসদ-সদস্যকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।ফলে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হচ্ছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের কোনো সংসদ সদস্য।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মো. আবদুর রউফ চৌধুরী।
তিনি ঢাকা মাদ্রাসা-ই-আলীয়া থেকে ফাজিল পাশ করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রথম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৭১ সালের মুজিব বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে তার একটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনাও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন হলে ২১ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে তিনি দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান ও ৪ নভেম্বর ঢাকার রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে গ্রেফতার হয়ে প্রায় দুই বছর কারাবরণ করেন এবং ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান।
তিনি ১৯৮৩ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন।
উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু মৃত্যুবরণ করলে এই আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মোকতাদির চৌধুরী এমপি নবম জাতীয় সংসদে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দশম জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হন। এবার তিনি শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পেলেন।