অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০৮ পিএম
সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর (কাটের) জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করুন, খরচ কমান। তবে ব্যয় বন্ধ করা যাবে না, একান্ত প্রয়োজনীয় ব্যয় করতেই হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এমন নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এর আগে একাধিকবার এমন নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
তিনি বলেন, একনেক বৈঠকে হাওড়ে উড়াল সড়ক নির্মাণসহ ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শেষ মুহূর্তে এসে সংশোধন করা হয়েছে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্প।
এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য এমদাদউল্লাহ মিয়া, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন, আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য নাসিমা বেগম এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে কাজের মান বৃদ্ধি এবং খরচ কমানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু খরচ বন্ধ করতে নিষেধ করেছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে একনেকের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইভিএম প্রকল্প আমাদের একনেকের তালিকায় ছিল না। এই প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া চলমান। তিনি বলেন, ইভিএম আগামী জাতীয় নির্বাচনে কতটা আসনে ব্যবহার করা হবে বা প্রকল্পটি অনুমোদন প্রক্রিয়ার কারণে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে কিনা সেটি বলতে পারবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানতে চাননি। আমরাও নিজেদের উদ্যোগে তাকে কিছু জানাতে যাইনি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আশ্রয়ণ নিয়ে একটি মূল্যায়ন করেছে আইএমইডি। যেটি আজ একনেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে অনেক ভালো বিষয় উঠে এসেছে।
দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে একনেক বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশের অর্থনীতি খুব খারাপ নয়। এ ক্ষেত্রে রিজার্ভ সর্বশেষ গত ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩২ বিলিয়ন ডলার ছিল। সেটি স্থিতিশীল আছে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় হয়েছে ২৭ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। বেড়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া রেমিট্যান্স এসেছে এ অর্থবছর ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে এসেছিল ১০ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। মূল্যস্ফীতি কমেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বিশ্ব মন্দার ঢেউ বাংলাদেশে লাগবে না। আমাদের কৃষি ও শিল্পের প্রবৃদ্ধি অনেক ভালো।
পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, গত ছয় মাসে একনেক বৈঠকে ১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন কিছু প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড়ে উড়াল সড়কসহ অনুমোদন পাওয়া ১১ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৮৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে সাত হাজার ৮২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে দুই হাজার ৮৮০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা সদর থেকে করিমগঞ্জ উপজেলার মচিখালি পর্যন্ত উড়াল সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৬৫১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এদিকে শেষ মুহূর্তে এসে ব্যয় বেড়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্পের। এতে ৩১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ল।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই নদীতে বহুমুখী বাঁধ নির্মাণ। এ ছাড়া বরিশাল জেলার কারখানা বিঘাই এবং পায়রা নদীর ভাঙন থেকে শেখ হাসিনা সেনানিবাস এলাকা রক্ষা। ঢাকা জেলার দোহার উপজেলাধীন মাঝিরচর থেকে নারিশাবাজার হয়ে মোকসেদপুর পর্যন্ত পদ্মা নদী ড্রেজিং ও বামতীর সংরক্ষণ। বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় ছোট দ্বীপ এবং নদীর চরের জন্য অভিযোজন উদ্যোগ প্রকল্প। মাতারবাড়ী কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ (সওজ অংশ)। ইস্টাবলিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিসট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেম প্রকল্প। বাংলাদেশে ২৫টি শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক স্যানিটেশন। ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট ফেইজ-২ খুলনা প্রকল্প এবং ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প।