Logo
Logo
×

পোশাকশিল্প

ক্রেতাদের পোশাকের মূল্য বাড়াতে হবে: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:২৮ পিএম

ক্রেতাদের পোশাকের মূল্য বাড়াতে হবে: পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা। এটি আরও বাড়ানো উচিত। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে বাংলাদেশে নিযুক্ত কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। 

অনুষ্ঠানে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমই নেতারা জানান, মূল বেতন ৮ হাজার টাকা হলেও একজন শ্রমিক সব মিলিয়ে ন্যূনতম ১২ হাজার টাকা বেতন পান। আর প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ভালো পণ্য, সবুজায়ন এবং শ্রমিকদের মজুরি চাইলে বিদেশি ক্রেতাদের পোশাকের উচ্চমূল্য (প্রিমিয়াম প্রাইস) দিতে হবে। তার মতে, রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিতে ডলারের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানে স্থানীয় একটি হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। 

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের উপপ্রধান থিজ উস্ট্রা এবং বিজিএমইএ সিনিয়র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা ফেলো মুনতাসির কামাল। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, পাঁচ বছর আগে সর্বশেষ মজুরি বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় একটি সাধারণ পরিবারের জন্য আট হাজার টাকা মোটেও ভালো মজুরি নয়। মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্যোক্তা ও সরকারের পাশাপাশি ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। 

সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। সেখানে পোশাক রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধা নিয়ে কথা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের পর পোশাক খাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না? 

জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, জিএসপি সুবিধা একটি প্রণোদনা। বিভিন্ন কিছুর ওপর নির্ভর করে তা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ পোশাক খাতে ভালো করছে। কিছু কিছু ফ্যাক্টরি আমি নিজেও ভিজিট করেছি। তাই আমি মনে করি, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যথেষ্ট সচেতন। 

নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের উপপ্রধান থিজ উস্ট্রা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশকে ন্যূনতম মজুরির ফাঁদ থেকে বের হতে হবে। এ অবস্থায় দেশের পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আর কত দিন পর্যন্ত আট হাজার টাকা থাকবে, বর্তমানে এটিই জরুরি প্রশ্ন। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির মডেল নিয়ে বাংলাদেশের পুনরায় চিন্তা করা প্রয়োজন। এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য একই সঙ্গে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। ফলে বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের পোশাক খাতের ৪৫ লাখ শ্রমিকের কথা চিন্তা করতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি এবং কাজের পরিবেশ উন্নত করার বিকল্প নেই।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শিল্প খাতের প্রাণ তৈরি পোশাক। এ খাতের অনেক ইতিবাচক দিক আছে। বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি সবুজ কারখানার ১৩টিই বাংলাদেশে। সবুজ ফ্যাক্টরিতে আমরা সহায়তা করি। যেমন: এ ধরনের কারখানার জন্য করপোরেট কর তুলনামূলকভাবে কম। আগামী নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও সবুজ খাতকে উৎসাহিত করা হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রপ্তানিকারকদের সুবিধা দিতে ডলারের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এটা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রণোদনা। তবে অর্থনীতির স্বার্থেই এটি জরুরি ছিল। পোশাক খাতের মজুরি নিয়ে কথা আসছে। গার্মেন্ট খাতের পণ্যের মূল্য সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারে না। মূল্য চাইতেও পারে না। বায়ারদের (বিদেশি ক্রেতা) কাছে এটা চাইতে হবে শিল্প মালিকদের। ভালো পণ্য চাইলে, সবুজায়ন চাইলে বায়ারদের প্রিমিয়াম মূল্য দিতে হবে। কারণ, আমরা জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের মধ্যে আছি। এই প্রতিবেদন আমাদের নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে। আমরা সবুজ ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে মনোযোগী হয়েছি। রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ। এখানে সবুজায়নের পাশাপাশি দূষণও কমাতে হবে। তিনি বলেন, বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না করে সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব। প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাঠামোর মধ্যে যেন সবাই কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনেক কারখানা বিভিন্ন ধরনের সবুজায়ন সনদ নিয়েছে। এর পাশাপাশি লিড একটা সার্টিফিকেশন আছে, যেটা ইউএস জিএফ-এর অধীনে হয়ে থাকে। এর মধ্যে জ্বালানি, পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কেমিক্যাল ওয়েস্ট এসবই আছে। সেই সনদ প্রায় ২০০ কারখানা নিয়েছে। আর ৪০০-৫০০ কারখানা পাইপলাইনে আছে। তিনি বলেন, আমরা যখন ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তখন শুনছি তাদের চাহিদা ভিন্ন। সবুজের সংজ্ঞা, সূচক ভিন্ন এই সনদের ক্ষেত্রে। সেখানে একধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এসব চাহিদা একীভূত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে রপ্তানিকারকদের সুবিধা হয়। একেক রপ্তানিকারকের চাহিদা একেক রকম। 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ায় তাদের কারখানায় ৯৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে। এছাড়া ৮৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ও ৯৫ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে। বড় কারখানাগুলোর মুনাফা বেড়েছে ৩৪ দশমিক ০৯ শতাংশ। 

অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সবুজায়নের পদক্ষেপে ৮১ দশমিক ৫৪ শতাংশ স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে, ৬৫ দশমিক ২০ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। এছাড়া কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ৭৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এ ধরনের ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ায় মাইক্রো বা ক্ষুদ্র কারখানার ৮৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে, আর চিকিৎসা খরচ কমেছে ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৬৩ দশমিক ৮৭ ও ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। মাইক্রো ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, আমাদের সবুজ কারখানা গ্লোবাল মডেল হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে। অন্যান্য দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। পোশাক কারখানা এর মধ্যে তীব্র নজরদারিতে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২ শতাধিক সবুজ কারখানা আমাদের আছে। ৭৩টি প্লাটিনাম রেটিং, ১৫০টি গোল্ড, ১০টি সিলভার রেটিং। বিশ্বের সেরা ১৫টি সবুজ ফ্যাক্টরির ১৩টি বাংলাদেশে। পাঁচ হাজার ফ্যাক্টরি সবুজায়ন সার্টিফিকেট নেওয়ার পথে আছে। তিনি বলেন, একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা হলেও সবমিলিয়ে তিনি কমপক্ষে ১২ হাজার টাকা পান।

ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল বলেন, আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া যতই সবুজ হোক, বের হওয়া পণ্যটি সবুজ না হলে ভবিষ্যতে বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বছরে ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপন্ন করে। আমরা সেটা সংগ্রহ করতে পারলে রিসাইকেল পণ্যে উৎপাদনের বড় সমস্যা সমাধান করতে পারব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম