
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:১৩ এএম

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৬ এএম

আরও পড়ুন
স্বৈরাচার উৎখাতে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণে সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে উজ্জ্বীবিত আশার প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন মেক্সিকোতে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
বৃহস্পতিবার মেক্সিকো সিটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত ৫৪তম স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মুশফিক এমন মন্তব্য করেন।
এতে গেস্ট অব অনার হিসেব উপস্থিত ছিলেন মেক্সিকো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মহাপরিচালক ফার্নান্দো গনজালেজ সাইফি।
মুশফিকুল ফজল বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের ভিত্তিটা ছিলো একটি গণতান্ত্রিক এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক দেশ গড়ে তোলা। পাঁচ দশকের বেশি সময় পর আজও সেই স্বপ্ন পূরণের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের অধিকার আদায়ে ছাত্র-জনতাকে রাজপথে রুখে দাঁড়াতে হয়েছে। সাহস এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে তৈরি করেছেন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস।
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ প্রতিটি বাংলাদেশির হৃদয়ে মর্যাদার জায়গা দখল করে রয়েছে। এই দিন থেকে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। জনগণের মুক্তির সে সংগ্রামে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের।
এই রাষ্ট্রদূত বলেন, এ যুদ্ধটা শুধু বিদেশি শক্তির অধীনতা থেকে মুক্তির যুদ্ধ ছিলোনা বরং এ যুদ্ধটা ছিলো শোষণ, বৈষম্য এবং অন্যায় থেকে মুক্তি লাভের। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নের ভিত্তিটা ছিলো একটি গণতান্ত্রিক এবং সকলের অংশগ্রহণমূলক দেশ গড়ে তোলা।
মুশফিক বলেন, পাঁচ দশকের বেশি সময় পর আজও সেই স্বপ্ন পূরণের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের অধিকার আদায়ে ছাত্র-জনতাকে রাজপথে রুখে দাঁড়াতে হয়েছে। সাহস এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে রাজপথে দাঁড়িয়ে যাওয়া ছাত্র-জনতা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে তৈরি করেছেন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান শুধু একটি বিক্ষোভ নয় বরং আমাদের উজ্জ্বীবিত আশার প্রতিক। এই আশাকে বাস্তবে রুপ দিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাহস এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই-- এই প্রধান বিষয়গুলোর সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।
দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, কার্যকর সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশের সাহসী জনগণের কারণে দেশের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে, এবং আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির ভিত্তি সুদৃঢ় হচ্ছে। এটা খুব গর্বের বিষয় যে এই মুহূর্তে ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে যেখানে ৫০ এর অধিক দেশের ৬ শতাধিক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের তাদের বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাই করছেন। বিশ্ব এখন বাংলাদেশের দিকে নতুন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তারা যা দেখছে তাতে আপ্লুত হচ্ছে।
মেক্সিকোর সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রদূত মুশফিক বলেন, আমরা যখন ভবিষ্যত বিনির্মানের পথে হাঁটছি তখন মেক্সিকোর সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব আলাদ গুরুত্ব তৈরি করছে। ২০২৫ সালে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি পূর্ণ হবে। এই সোনালী মাইলফলককে উদযাপন করতে বাংলাদেশ মেক্সিকোতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে এ বছরের শেষ দিকে মেক্সিকোতে বাংলাদেশের ৩য় ফরেন কনস্যুলার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশ এবং মেক্সিকো একই নীতি অনুসরণ করে। ব্যবসা, সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং উদ্ভাবনে দুই দেশের অংশীদারিত্ব রয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক, ঔষুধ, পাট এবং শিক্ষা খাতে মেক্সিকোর জন্য অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে। আজকের এই আয়োজন আমার দেশের জনগণ, বাণিজ্য এবং স্বপের সঙ্গে মেক্সিকোকে এক সুতোয় গেঁথে দেবার প্রচেষ্টা।
মেক্সিকো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ফার্নান্দো গনজালেজ সাইফিতার বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং জনগণকে স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। অ্যাম্বাসেডর সাইফি তার বক্তব্যে ম্যাক্সিকোর সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এবছর আমরা কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ তম বার্ষিকী পালন করবো।
তিনি দুই দেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও জোরদার হবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্বৈরাচারের পতন পরবর্তী বাংলাদেশে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে আশাবাদ ব্যক্ত করে অ্যাম্বাসেডর সাইফি বলেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সরকার দেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সচেষ্ট হবে। ভবিষ্যতে দুই দেশ কী করতে পারে সেটা নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করার এটা উপযুক্ত সময়।
তিনি বলেন, দুই বছর আগে আমার ঢাকা সফরের সুযোগ হয়েছিলো। বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ দুই দেশের মধ্যে কাজ করার বিস্তৃত ক্ষেত্র রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পোশাক এবং ঔষুধ শিল্প নিয়ে দুই দেশের কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বক্তৃতা পর্ব শেষে রাষ্ট্রদূত মুশফিক আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটায় অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে অতিথিদের বাংলাদেশি ঐতিহ্য অনুযায়ী খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করানো হয়।
এছাড়া মেক্সিকোতে অবস্থানরত ৫০টির ও বেশি দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশনপ্রধান, রাজনীতিক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।