মালয়েশিয়ায় শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৫৪ এএম
ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে।
ফার্স্ট সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) রেহেনা পারভীনের উপস্থাপনায় আলোচনাসভায় মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরেন হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’ গঠনে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণ এবং প্রবাসী পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সফল করতে তাদের সহযোগিতা কামনা করেন হাইকমিশনার।
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় হাইকমিশন চত্বরে নির্মিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন হাইকমিশনর মো. শামীম আহসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করেন হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় সফররত বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্যবৃন্দ পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পর মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। দিবসের মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অলোচনাসভায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনে কর্মরত তামিল, ম্যান্ডারিন ও মালয় ভাষাভাষীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। এর পর ভাষা আন্দোলনসংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অপরদিকে বাংলাদেশ হাইকমিশন, টেলরস ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া এবং সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস অব বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার টেইলর ইউনিভার্সিটির গ্র্যান্ড হলে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান। মালয়েশিয়ার টেইলরস বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্র্যান্ড হলে’ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা, প্যানেল আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং ৯ দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে, হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) ও দূতালয় প্রধান ফারহানা আহমেদ চৌধুরীর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। মাতৃভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছে। তিনি ঐতিহাসিক মাতৃভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকার কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভাষাশহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান তার বক্তব্যে বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখন সারাবিশ্বে ভাষাগত বৈচিত্র্য উদযাপনের দিনে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাসহ শহিদদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানের মূল আলোচনাসভায় অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক, সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস, বাংলাদেশ এবং মিসেস মাকি কাতসুনো-হায়াশিকাওয়া, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউনেস্কো আঞ্চলিক অফিস, জাকার্তার ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়। অন্যান্য বক্তার মধ্যে ছিলেন প্রফেসর ড. অনিন্দিতা দাশগুপ্ত, বিভাগীয় প্রধান-স্কুল অব লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস, টেলরস ইউনিভার্সিটি। এই পর্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর একটি প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ ও মাকি কাতসুনো-হায়াশিকাওয়া তাদের ধারণকৃত বক্তব্যে বহুভাষিকতা রক্ষা ও প্রচারের জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এর ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রফেসর ড. অনিন্দিতা দাশগুপ্ত তার সমাপনী বক্তব্যে শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার এবং ভাষা সংরক্ষণে প্রযুক্তির গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়াং হুই, এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ফিউচার ইন এডুকেশন অ্যান্ড সোসাইটির (এপিজেএফইএস) ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ড. কালাই ভানি রাজন্দ্রাম এবং স্যার এম বিশ্বেশ্বরায়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ব্যাঙ্গালোরের শিক্ষক গৌথম কুমার। এ সময় আলোচকরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে সব ভাষাভাষীর ঐক্যের চেতনার কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে তারা ঐক্যের একটি শক্তিশালী ও অনুপ্রেরণামূলক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেন। বক্তারা বহুভাষিকতার প্রসারে প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের পাশাপাশি হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিদেশি অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এই প্রদর্শনীতে ’৫২-র ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ধারাবাহিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ৯ দেশের শিল্পীদের সমন্বয়ে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। ভারত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশন, সুদান, তানজানিয়া, নেপাল এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিবারের সদস্য এবং শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শকদের বিমোহিত করে। একই মঞ্চে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের বর্ণিল পরিবেশনা এক অনন্য সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনারের সহধর্মিণী, কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারবর্গ, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং প্রবাসীরা তাদের পরিবারসহ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে আগত অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশি এবং মালয়েশিয়ান খাবার পরিবেশন করা হয়।