Logo
Logo
×

পরবাস

সিডনিতে মাসব্যাপী রামাদান উৎসব 

Icon

শাত শামীম 

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:০০ পিএম

সিডনিতে মাসব্যাপী রামাদান উৎসব 

সিডনি শহর থেকে মাত্র ২০ কিমি দূরে লাকেম্বা এখন গোটা অস্ট্রেলিয়াতে বিখ্যাত রোজায় মাসব্যাপী রামাদান নাইট ফেস্টিভ্যালের জন্য। লাকেম্বার হেল্ড্রন স্ট্রিট মূল সড়কের যান চলাচল বন্ধ করে এই উৎসব প্রথম রোজার বিকাল থেকে শুরু হয়ে চলে ঈদের দিন পর্যন্ত। বিকাল বেলা ইফতারির আয়োজনে শুরু হয়ে চলতে থাকে রাত চারটার সেহরির সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত। 

এ আয়োজনের শুরুটা ২০০৬ থেকে, মাত্র কয়েকটা দোকান দিয়ে উটের মাংসের বার্গার দিয়ে। তারপর যুগ পেরিয়ে এই উৎসব এখন ১.২ মিলিয়ন মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সতের হাজার বাসিন্দার লাকেম্বা শহরের একটা ছোট মুসলিম কমিউনিটির উৎসবে ১২ লাখ মানুষের সমাগম বিরাট ব্যপার। মুসলিম ধর্মীয় উৎসব ছাড়িয়ে লাকেম্বার রমাধান নাইটস হয়ে গেছে ধর্ম, বর্ণ, জাতির ঊর্ধ্বে। 

লোকাল কাউন্সিলর বলছে এই এক মাসে এখানে ৩৩ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয়। বিশাল অস্ট্রেলিয়ার সব প্রান্ত থেকে তো আসেই এখন এই উৎসব দেখতে অনেক পর্যটক অস্ট্রেলিয়ার বাইরে থেকে আসে। নানা বাহারি ইফতারের পর এখানের তিনটি মসজিদে তারাবি চলে, মিউজিকের পরিবর্তে কোরান তেলায়াত চলছে আর প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পরিচিত হচ্ছে মুসলিম দেশের খাবারের সঙ্গে। 

মুসলিম প্রায় সব দেশের আলাদা স্টল আছে সব মিলিয়ে যা একশ’র বেশি হবে। বাংলাদেশি স্টলে একদম পুরান ঢাকার আমেজ পাওয়া যাবে। শাহী জিলাপি থেকে মামা হালিম, সঙ্গে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ আর ছোলা-মুড়ি। বাংলাদেশি খাবারের মধ্যে হালিম সবচেয়ে জনপ্রিয় জানা গেল। তবে এই উৎসবে সবচেয়ে জনপ্রিয় আরবিয়ান উটের মাংসের বার্গার। একটি বার্গার পেতে প্রায় ১০০ জন্যের লম্বা লাইনে হাসি মুখে অপেক্ষা করে সবাই। 

আরাবিয়ান মাটন মান্ডি আর হরিণের মাংসের বার্গার আছে তারপরের তালিকায়। এরপর সবচেয়ে লম্বা লাইন দেখা যায় লেবানিজ মিষ্টান্ন কুনাফা আর ফালাফেলের জন্য। টার্কিশ মিষ্টান্ন বাক্লাভা আর ভেড়ার মাংসের নানা কাবাবের সুঘ্রাণে যে কাউকেই মোহিত করবে অনায়েসে। ক্লান্তি দূর করতে আছে বাংলাদেশি মালাই চা আর কাশ্মীরি গোলাপি চা। 

সিডনি থেকে প্রায় ৫০০ কিমি দূরে আর্মিডেল থেকে এই উৎসব দেখতে এসেছে বাংলাদেশি ছাত্র মো. আবু সাঈদ। তিনি বললেন, ‘রোজার ধর্মীয় আবহের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের একটা সাংস্কৃতিক চর্চা আছে যেটা বিদেশে পাওয়া যায় না। এখানে আসলে সেই ফিলটা পাওয়া যায়।’

উৎসবে আসা আরেক বাংলাদেশি যিনি লাকেম্বাতেই থাকেন, নিশাত আরশি জানান, ‘এখানে মহিলাদের তারাবির নামাজের জামাত হয়। নামাজ শেষে একেক দিন একেক দেশের খাবার টেস্ট করার মজাই আলাদা। এমনিতে সিডনিতে শীতের রাতে আটটা বাজলেই বাইরে কোনো মানুষ দেখা যায় না, আর রোজায় এখানে ভোর রাতে মানে সেহরি পর্যন্ত মানুষের কোলাহলে মুখরিত থাকে, এই ব্যাপারটা দারুণ উপভোগ্য।’  

উৎসবে আগত স্থানীয় অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক কাইল ও জেসিকা দম্পতির সঙ্গে কথা হয়, যারা অন্য অনেকের মত নিজেদের দুই সন্তানসহ এসেছেন। কাইল জানান, প্রতি বছর রোজায় তার পরিবার একাধিক বার এখানে আসেন। তিনি আরো বলেন, ‘মুসলিম বিশ্বের খাবারের সঙ্গে সঙ্গে তার বাচ্চারাও অন্য ধর্মের আচার আচরণ সম্পর্কে জানে যা তাদের অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়।’

এইসব আয়োজন পৃথিবীর নানা প্রান্তের মুসলিম অভিবাসী মানুষকে একত্রিত করে এবং একই সঙ্গে নিজ দেশের সামাজিক আর ধর্মীয় কৃষ্টি ভিনদেশে নিজেদের আপন উপস্থিতি জানান দেয়। সঙ্গে সঙ্গে এই দেশে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম পরিচিত হয় নিজ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে। অভিবাসীরা যে যেই দেশ থেকেই আসুক না কেন, প্রত্যেকেই নিজের বুকে ধারণ করে নিজের দেশ, নিজের সংস্কৃতি।

লেখক :  পিএইচডি গবেষক,  ইউএনএসডব্লিউ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম