অশ্রুঝরা আগস্ট
শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিন আজ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
একজন মানুষ মৃত্যুর পরও কতটা শক্তিশালী তার উদাহরণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একটি জাতির কতটা হৃদয়জুড়ে তিনি রয়েছেন তা সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘পনেরো আগস্ট’ কবিতায় খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়।
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কবি লিখেছেন, ‘এখনো রক্তের রঙ ভোরের আকাশে। পৃথিবীও বিশাল পাখায় গাঢ় রক্ত মেখে, কবে থেকে ভাসছে বাতাসে। অপেক্ষায়-শব্দের- শব্দেই হবে সে মুখর-আরও একবার, জয় বাংলা ধ্বনি লয়ে যখন সূর্যের আলো তার, পাখায় পড়বে এসে, ইতিহাস থেকে আরও কিছুক্ষণ পরে। মানুষ তো ভয় পায় বাকহীন মৃত্যুকেই, তাই ওঠে নড়ে, থেকে থেকে গাছের সবুজ ডালপাতার ভেতরে।’
খুব বেশি সময় নয়, মাত্র সাড়ে তিন বছর। গোটা জীবন ত্যাগ আর কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে সবে স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে-এটাই তার স্বপ্ন। আত্মনির্ভরশীল হবে-এটাই তার চাওয়া। উন্নত জীবন পাবে-এর জন্যই তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের নেতৃত্ব নিয়ে রাতদিন পরিশ্রম করছিলেন। তখনই এলো ভয়াল ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করল নরপিশাচরূপী ঘাতকচক্র।
আজীবন সংগ্রাম আর ত্যাগে যিনি আমাদের এনে দিয়েছিলেন মহান স্বাধীনতা, মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীন সেই দেশেই হায়েনার দল কেড়ে নিয়েছিল সেই পিতার প্রাণ। সেই থেকে এই মাসটি মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনাবিধুর শোকের মাস হিসাবে পরিচিত। বেদনা আর শোকের দুর্বিষহ স্মৃতি নিয়ে আবারও হাজির হয়েছে সেই শোকাবহ আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানো বেদনাবিধুর এই মাসের প্রথম দিন আজ।
সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার সহধর্মিণী, মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভ্রাতা শেখ আবু নাসের, জাতির পিতার বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মেজো ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ছোট ছেলে নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহিদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হন।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু, তা বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে থাকেন তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবছরের মতো এবারও আগস্ট মাসকে বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগসহ পুরো জাতি পালন করবে শোকের মাস হিসাবে। ১ আগস্টের প্রথম প্রহর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, শোক ও ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে।