‘আমাকে সরানো সহজ নয়’—যুক্তরাষ্ট্রের চাপে জেলেনস্কির পাল্টা বার্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৬ পিএম

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে সরিয়ে দেওয়া সহজ হবে না। তবে তিনি আবারও ঘোষণা করেছেন, যদি তার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে ন্যাটো সদস্যপদ দেওয়া হয়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করতে রাজি।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বৈঠকের পর মার্কিন রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধানের জন্য জেলেনস্কিকে হয়তো পদত্যাগ করতে হতে পারে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের কথা বিবেচনা করলে, আমাকে সরিয়ে দেওয়া এত সহজ হবে না। শুধু নির্বাচন দিলেই হবে না, আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেওয়াও দরকার। এটা একটু কঠিন হবে। মনে হচ্ছে, আপনাদের আমার সঙ্গেও আলোচনা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে বলেছি, ন্যাটো সদস্যপদের বিনিময়ে আমি পদত্যাগ করব। তখনই আমার মিশন সম্পন্ন হবে।’
ওভাল অফিসে বিতর্ক, চাপে জেলেনস্কি
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর জেলেনস্কি কোনো চুক্তি ছাড়াই ফিরে যান। এই বৈঠকে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের স্বত্ব ভাগাভাগি নিয়ে একটি প্রাথমিক চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল, যা শেষ পর্যন্ত হয়নি।
ইউরোপীয় নেতারা প্রকাশ্যে জেলেনস্কির পাশে দাঁড়ালেও মার্কিন রিপাবলিকানরা তাকে সরানোর বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ সিএনএনকে বলেন, ‘আমাদের এমন একজন নেতা দরকার, যিনি আমাদের সঙ্গে ও শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনায় বসতে পারবেন এবং এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি স্পষ্ট হয়ে যায় যে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্য থেকে ভিন্ন, তাহলে আমাদের জন্য এটি বড় সমস্যা হবে।’
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান মাইক জনসন আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘জেলেনস্কিকে হয় বাস্তবতা বুঝতে হবে এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আলোচনায় ফিরতে হবে, অথবা অন্য কাউকে ইউক্রেনের নেতৃত্ব নিতে হবে।’
রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থান
এই ঘটনার পর হোয়াইট হাউসের ভেতরে ও বাইরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সিনিয়র ডেমোক্র্যাটরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ট্রাম্প কার্যত রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে দুর্বল করছে।
উল্লেখ্য, জেলেনস্কি বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করতে হলে দেশটিকে ন্যাটো সদস্যপদ দিতে হবে। তবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই সামরিক জোট এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে নারাজ।
এদিকে, ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, ‘যদি কোনো সমঝোতা হয়, তাহলে ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার আশা ছেড়ে দিক। সম্ভবত এটাই পুরো সংঘাতের মূল কারণ।’
রাশিয়া বরাবরই ইউক্রেনের সম্ভাব্য ন্যাটো সদস্যপদকে ২০২২ সালের সামরিক আগ্রাসনের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে আসছে।